২ মে, ২০১৬ ১২:৪৭

'কামসূত্র' সম্পর্কে বিদেশিরা ঠিক যা যা ভাবেন...

অনলাইন ডেস্ক

'কামসূত্র' সম্পর্কে বিদেশিরা ঠিক যা যা ভাবেন...

রামায়ণ বা মহাভারতকে নিয়ে যতটা ভাবেন বিদেশিরা তার চাইতে ঢের বেশি ভাবেন ‘কামসূত্র’-কে নিয়ে। কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে এই তথ্যের সত্যতা বোঝানো যাবে না। কিন্তু লক্ষ করার ব্যাপার এটাই, এই বিশেষ ভারতীয় গ্রন্থটির এত বেশি সংস্করণ, এত বিচিত্র পুনঃপ্রকাশ ঘটেছে যে, তার সঙ্গে অন্য কোনো ভারতীয় বইয়ের তুলনা করাটাই অসঙ্গত। ভারতকে ‘ল্যান্ড অফ কামাসূত্রা’ বলে উল্লেখ শুধু নয়, তাঁরা ‘কামসূত্র’-এর সূত্র ধরে এমন কিছু ধারণায় অবস্থান করেন, যা শুনলে ভারতীয়রা চমকে উঠবেন।

‘কামসূত্র’ ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছিল মূলত ১৯ শতকের শেষদিকে। ইংল্যান্ডে তখন ভিক্টোরিয়ান রক্ষণশীলতার দাপট। সেই সময়ে স্যর রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টনের অনুবাদ ঝড় তোলে। চরম রক্ষণশীল পরিমণ্ডলে যৌনতা সম্পর্কে একটা খোলা জানালা যে রোম্যান্সের সৃষ্টি করে, তাকে ভুলতে পারেনি বেশ কয়েক প্রজন্মের মানুষ। বার্টনের রোমাঞ্চকর জীবনের সঙ্গে জুড়ে যান কামসূত্র বইয়ের লেখক বাৎস্যায়ন। আর এমন একটা পাঠকৃতি তৈরি হয়, যা ‘কামসূত্র’-এর প্রকৃত মহিমা থেকে বহু দূরের ব্যাপার।

ভিক্টোরিয়ান নৈতিকতার যুক্তিসিদ্ধ কথায় বেড়ে উঠছিল পাশ্চাত্য মেডিক্যাল সায়েন্স। যৌনতাকে একটা শারীরবৃত্তীয় কাজ বলে বার বার বর্ণনা করে সে যুগের চিকিৎসাবিদ্যা। সেখানে ‘কামসূত্র’ বিবেচিত হতে শুরু করে ‘বুক অফ প্লেজার’ হিসেবে। ‘প্লেজার’-এর ধারণাকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেয় ‘কামসূত্র’। কে কতটা পড়েছিলেন জানা নেই, তবে মিথ তৈরি হতে শুরু করে এই বইকে ঘিরে।

‘কামসূত্র’-কে একটি আদ্যন্ত রগরগে বই হিসেবে ভাবেন পশ্চিমের একটা বড় অংশের মানুষ। এই গ্রন্থের দুরূহতা তার একটা বড় কারণ। অসংখ্য ‘উপলেখক’ ‘কামসূত্র’-এর ইলাস্ট্রেটেড এবং কফি-টেবল ভার্সন তৈরি করেন। যাতে আরও বেশি করে প্রতীয়মান হতে শুরু করে এই বিশ্বাস। অগণিত ‘অ্যালবাম’, ফোটো-সংকলন ‘কামসূত্র’-কে প্রায় পর্নগ্রাফির পর্যায়ে নিয়ে যায়।

১৯৭০ দশকে হিপি আন্দোলনের সময়ে ভারত নিয়ে একটা বিরাট আতিশয্য দেখা দেয় পশ্চিমা বিশ্বে। ভারতকে একটা ‘ফ্যান্টাসি’-র দেশ হিসেবে বর্ণনা করতে উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় ‘কামসূত্র’। সেই সঙ্গে খাজুরাহো-কোনার্ক যুক্ত হয় ‘কামসূত্র’-এর পিছনে। গড়ে উঠতে শুরু করে ‘কামসূত্র-প্যাকেজিং’।

এই প্যাকেজকে বহুগুণে বাড়ায় জগমোহন মুন্দ্রা-পরিচালিত ‘টেলস ফ্রম কামাসূত্রা’-জাতীয় ছবি। ‘ভারতীয়’ পরিচালকের কাছ থেকে প্রাপ্ত এই ছবি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। তাতে মুন্দ্রা যেসব নিজস্ব ইনপুট দিয়েছিলেন, সেগুলোকে বাৎস্যায়নীয় বলে বিশ্বাস করেন পশ্চিমের একটা বড় অংশের মানুষ। তার পরে ‘কামসূত্র’-ছবির ঢল নামে পশ্চিমে। এদের বেশিরভাগই বি-গ্রেড মুভি। কিন্তু তাতে বাণিজ্য কিছু মন্দ হয়নি।

মীরা নায়ারের ‘কামসূত্র’ ছবিটি রোম্যান্সকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেয়। ছবির উপজীব্য ঠিক কী, তা না বুঝেই ‘প্রাচ্য ইরোটিকা’-র আর একটা বড় ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেদার বিক্রি হতে থাকে ‘কামসূত্র-অ্যালবাম’, ‘কামসূত্র-মেমেন্টো’ ইত্যাদি প্রভৃতি। এই ছবির লেজ ধরে নির্মিত হয় একগাদা বি-গ্রেড মুভি।

পশ্চিমের পর্ন-ইন্ডাস্ট্রিতে ‘কামসূত্র’ একটা স্টক বিষয়। পর্নের ভাঁড়ারে আকাল দেখা দিলেই ‘কামসূত্র’ ট্যাগ লাগিয়ে যা খুশি তাই প্রকাশের একটা প্রবণতা পর্ন-ইন্ডাস্ট্রি রপ্ত করে। এরপর তা ইন্টারনেটে ছাড়া হয়।

এই সব গোলযোগে বাৎস্যায়ন আর তাঁর মূল গ্রন্থটি কোথায় যেন খাবি খেতে খেতে হারিয়ে যায়। সাহেবরা না হয় ‘ভুল’ করেন। ভারতীয়রা কতটা খবর রাখেন ‘কামসূত্র’-র?

সূত্র: এবেলা

বিডি-প্রতিদিন/০২ মে, ২০১৬/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর