ঘটনাটি ভারতের। দেশটির কেরালা রাজ্যের পাঠানামথিট্টা জেলার কালানজুর গ্রামের বাসিন্দা নওশাদ (৩৪) দুই বছর ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তাকে খুঁজতে গিয়ে গলদঘর্ম স্থানীয় পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা নওশাদের স্ত্রী আফসানাকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এতে তিনি স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তবে এর মাত্র দুই দিন পর সবাইকে হতবাক করে দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন নওশাদ।
জানা গেছে, নওশাদের মা–বাবা ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন ২০২১ সালের ১ নভেম্বর। ওই তার স্ত্রী আফসানা পুলিশকে জানিয়েছিলেন- স্বামী নিখোঁজের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
তবে নওশাদের কোনও হদিস না পেয়ে গত সপ্তাহে আবার আফসানার কাছে যায় পুলিশ। এবার তিনি প্রথমে বলেন, সম্প্রতি তিনি নওশাদকে দেখেছেন। তারপর তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জেরার মুখে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন, বন্ধুদের নিয়ে স্বামীকে হত্যা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, নওশাদের মরদেহ তাদের ভাড়া করা বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রেখেছেন। পরে মরদেহের খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। আফসানার দেখানো পাঁচ স্থানে মাটি খোঁড়া হয়। তবে সেসব স্থানে কিছুই পাওয়া যায়নি।
এদিকে স্ত্রীর স্বীকারোক্তির বরাতে নওশাদের ‘হত্যার’ খবর প্রকাশিত হয় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোয়। খবরে তার ছবিও ছাপা হয়। সেই খবর চোখে পড়ে নওশাদের। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফেরার।
এদিকে, স্বীকারোক্তির পর জেলে পাঠানো হয় স্ত্রী আফসানাকে। সেখানে তিনি গণমাধ্যমের কাছে পুলিশি হেফাজতের বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ করেন।
আফসানা বলেন, “আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রথমেই জানাই নওশাদের বিষয়ে কিছুই জানি না। কিন্তু পুলিশ আমাকে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে এবং হুমকি দিয়ে বলে হত্যার কথা স্বীকার না করলে আমার সন্তানকে আর কখনওই দেখতে পাব না। আমার বাবাকেও এই মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। তাই আমি হত্যার স্বীকারোক্তি দিই। আর তাছাড়া আমি জানতাম না যে, স্বীকারোক্তি দিলেই পুলিশ আমাকে হত্যা মামলায় জড়িয়ে দেবে।”
তবে নওশাদের খোঁজ মেলার পর জামিন পেয়েছেন আফসানা।
আসলে কী হয়েছিল নওশাদের? বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে খোলাসা করেছেন নওশাদ নিজেই।
তিনি জানান, স্ত্রী আফসানার সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছিল। এরপর স্ত্রী কয়েক বন্ধুকে নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে দেখতে পান, বাড়িতে একা পড়ে আছেন। এতে তিনি ভয় পেয়ে যান। ভয় হয়, স্ত্রী ও তার বন্ধুরা ফিরে এসে তাকে হত্যা করতে পারেন। তখন সেখান থেকে পালিয়ে যান। প্রাণ হারানোর শঙ্কায় এরপর থেকে মা–বাবার সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি নওশাদ।
এদিকে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের ইদুক্কি জেলায় একটি চাকরি শুরু করেন তিনি। তবে সেখানে অতীতের কথা কাউকে জানাননি। পরে স্ত্রীর হাতে খুন হওয়ার খবর চোখে পড়লে মা–বাবার কাছে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সাক্ষাৎ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে চান বলে জানান তিনি।
খবরে জানা গেছে, নওশাদ প্রায়ই মাদক সেবন করে মাতাল অবস্থায় বাড়িতে ফিরতেন এবং স্ত্রীকে মারধর করতেন। সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস, দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া
বিডি প্রতিদিন/কালাম