ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি সমতলের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত স্টোনহেঞ্জ, যা খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০০ থেকে ১৬০০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে নির্মিত হয়েছিল। এটি নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরগুলো দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়েলস এবং উত্তর-পূর্ব স্কটল্যান্ড থেকে আনা হয়েছিল।
সম্প্রতি ‘আর্কিওলজি ইন্টারন্যাশনাল’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের জনগণ তাদের স্থানীয় পাথরগুলো উইল্টশায়ারে নিয়ে এসে স্টোনহেঞ্জ নির্মাণে অবদান রেখেছিলেন। এটি প্রাচীন ব্রিটেনের রাজনৈতিক ঐক্য ও অভিন্ন পরিচয় প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার প্রতিফলন ছিল।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই বিশাল ও ভিন্নধর্মী পাথরগুলো একত্রিত করা দূরবর্তী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে জটিল সম্পর্কের প্রতীক ছিল। হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে কাজ করে পাথরগুলোকে স্থানে স্থানে সরিয়ে আনেন, যাতে প্রায় আট মাস সময় লেগেছিল। স্কটল্যান্ড থেকে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে পাথর স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণার প্রধান লেখক মাইক পার্কার পিয়ারসন সিএনএনকে বলেন, এই নতুন তথ্য আমাদের স্টোনহেঞ্জের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বোঝাপড়া উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। এটি দেখায় যে, স্যালিসবারি সমতলের এই স্থানটি কেবল স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য নয়, সমগ্র ব্রিটেনের মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই তারা শত শত মাইল দূর থেকে বিশাল পাথরগুলো এখানে নিয়ে এসেছিলেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, স্টোনহেঞ্জ স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত বেলেপাথরের জন্য পরিচিত। ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনায় লম্বা সরসেন পাথরের পাশাপাশি ৮০টি ‘ব্লুস্টোন’ রয়েছে, যা ভাঙার পর বা ভেজা অবস্থায় নীলচে আভা প্রদর্শন করে।
নব্যপ্রস্তরযুগের মানুষরা শীতকালে এই স্থানে সমবেত হয়ে গবাদি পশু ও শূকর নিয়ে উৎসব করতেন। বিজ্ঞানীদের মতে, স্টোনহেঞ্জ সেই সময়ের বৃহত্তম সমাধিক্ষেত্র ছিল, যা নির্দেশ করে এটি ধর্মীয় মন্দির, সৌর ক্যালেন্ডার এবং প্রাচীন মানমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল