আইসল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ডের মাঝখানে অবস্থিত ডেনমার্ক প্রণালির পানির নিচে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতের সন্ধান মিলেছে। সমুদ্রতলের গভীর চ্যানেলে গঠিত এই জলপ্রপাতের উচ্চতা সাড়ে ১১ হাজার ফুট, যা ভেনেজুয়েলার বিখ্যাত অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতের (৩২১২ ফুট) চেয়ে বহুগুণ বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ থেকে ১১ হাজার ৫০০ বছর আগে শেষ বরফ যুগের সময় গঠিত হয়েছিল।
পানির নিচে থাকা এই বিশাল জলপ্রপাত ভূপৃষ্ঠ থেকে সরাসরি দেখা যায় না। তবে এর কার্যক্রম সমুদ্রের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততায় স্পষ্ট প্রভাব ফেলে। স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনা সানচেজ ভিদাল জানান, জলপ্রপাতের উপস্থিতি সরাসরি দৃশ্যমান না হলেও, সমুদ্রের লবণাক্ততা ও তাপমাত্রার পরিবর্তন এর প্রভাবের প্রমাণ দেয়।
প্রায় ৩০০ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জলপ্রপাত ডেনমার্ক প্রণালির বিশালতায় অনন্য। এটি নরডিক সাগর থেকে ইরমিঙ্গার সাগরে ঠান্ডা পানি প্রবাহিত করে এবং সমুদ্রের স্রোত ও তাপ সঞ্চালনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই জলপ্রপাতের পানির প্রবাহ আপেক্ষিকভাবে ধীরগতির। প্রতি সেকেন্ডে পানির গতি মাত্র ১ দশমিক ৬ ফুট, যেখানে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ ফুট পানির গতি থাকে। বিজ্ঞানী মাইক ক্লেয়ার ব্যাখ্যা করেন, জলপ্রপাতের ঢাল তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় পানির গতি ধীর। তবে এর প্রভাব সমুদ্রের গভীরে অত্যন্ত জটিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ বরফ যুগে গলিত হিমবাহের কারণে ডেনমার্ক প্রণালিতে ঢালু সমুদ্রতল তৈরি হয়েছিল, যা এই জলপ্রপাতের জন্ম দেয়। বর্তমানে এই জলপ্রপাত মেরু জলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে। এটি সমুদ্রের তাপ সঞ্চালন এবং গভীর স্রোতের গঠনে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।
ডেনমার্ক প্রণালির এই আবিষ্কার কেবল একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, বরং এটি বৈশ্বিক সমুদ্রবিজ্ঞান এবং জলবায়ু গবেষণায় নতুন দৃষ্টিকোণ যোগ করেছে।