রেলওয়ে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধার নাম। এ নিয়ে দুদকের পাঁচটি মামলা থেকে ইউসুফ আলী মৃধাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন বৈঠকে ওই চার্জশিট দাখিলের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদকের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের সিআরবি চট্টগ্রামের সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার (সাময়িক বরখাস্তকৃত) গোলাম কিবরিয়া, অতিরিক্ত প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিজিপি ওয়াই লোকো শেডের সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) গ্রেড-২ মো. গোলাম রহমান, ঢাকা লোকোশেডের সহকারী লোকোমাস্টার নাজমুল হোসেন, কুলাউড়া শেডের সহকারী লোকোমাস্টার রতন মলি সিংহ, দেওয়ানগঞ্জের সহকারী লোকোমাস্টার মো. শহিদুল ইসলাম, ময়মনসিংহে কেওয়াটবালীর সহকারী লোকোমাস্টার মিজানুর রহমান, চট্টগ্রামের লাকসাম লোকোশেডের সহকারী লোকোমাস্টার মো. মুহিদ, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী লোকোশেডের মাস্টার মো. দিদার হোসেন, সহকারী লোকোমাস্টার মো. জসিম উদ্দিন, রেহেনা আবেদীন, খুরশিদা আকতার, কুলসুম আক্তার, মো. শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ আফতাব উদ্দীন, শাহাদাত হোসেন, রাজশাহী কট্রোল অফিসের সহকারী লোকোমাস্টার জি এম শাহ আলম, দিনাজপুর পার্বতীপুর লোকোমাস্টার নাজরিন আক্তার, সহকারী লোকোমাস্টার মো. শাহীন রেজা আরিফ, পাবনা ঈশ্বরদী সহকারী লোকোমাস্টার আবু মো. জুবায়ের, লালমনিরহাট লোকোশেডের সহকারী লোকোমাস্টার আবদুল কাদের, খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) মো. আবদুল ওয়াদুদ ভূঞা, হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম ও একই প্রতিষ্ঠানের পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক তপন কুমার দাসসহ ৩২ জন।
২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি (মামলা নম্বর ৩৩) দায়ের করা হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় প্রধানের মতামত ছাড়াই লোকোমাস্টার ও সহকারী লোকোমাস্টার নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। ওই কমিটি জেলাভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর তালিকা না করে সব জেলাকে একীভূত করে তালিকা তৈরি করে। ফলে ২৮ জেলা থেকে ৩২ জন প্রার্থী কম নেওয়া হয়। এই ৩২ পদ পূরণ করা হয়েছে ১৯ জেলা থেকে, যা নিয়মবহির্ভূত। প্রার্থীদের উত্তরপত্রে মূল্যায়নকারী শিক্ষকের স্বাক্ষর ছিল না। অকৃতকার্য প্রার্থীর উত্তরপত্রে কাটাকাটি করে ২০ বা এর বেশি নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১০ নম্বর গ্রেস দিয়ে ৩৯ জনের মধ্যে ২৪ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় পাস দেখিয়ে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। একইভাবে ৩৮ জন প্রার্থীকে গ্রেস না দিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই সব অনিয়ম করেছেন বলে দুদেকর তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
তবে যথারীতি অব্যাহতি পেয়েছেন চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা। এর আগে ২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা একটি মামলা (মামলা নম্বর ১৯) এবং ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল দায়ের করা তিন মামলা (মামলা নম্বর ৩৪, ৩৫, ৩৬) থেকেও অব্যাহতি পান তিনি।
প্রতিটি চার্জশিটে ইউসুফ আলী মৃধা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। তিনি তার দৈনন্দিন কার্যক্রম (রুটিন ওয়ার্ক) হিসেবে শুধু অনুমোদন করেছেন মাত্র। তিনি এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তদন্তকালে এ ধরনের কোনো প্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুর রেজা অভিযোগটি অনুসন্ধান ও তদন্ত করেন।
২০১১ সালে রেলের পূর্বাঞ্চলে ২৫টি শ্রেণিতে এক হাজার ১৭৭ জনের বিপরীতে এক হাজার ১১৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রেলের কন্ট্রোল অপারেটর, কার্পেন্টার, কোর্ট ইন্সপেক্টর, টিকিট ইস্যুয়ার, সহকারী কেমিস্ট, সহকারী লোকোমাস্টার, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস, ফুয়েল চেকার ও টুলকিপারসহ ২৫ শ্রেণিতে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ২০১২ সালে দুদক বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেছিল।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪/ আহমেদ