শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বড় বড় সোনার চালান ধরা পড়লেও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মশা, মাছি, তেলাপোকা, ইঁদুর, চিকা ও বিড়াল। বিড়াল থাকলে ইঁদুর সবসময় সেই এলাকা এড়িয়ে চলে। কিন্তু হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। এখানে ইঁদুর-বিড়ালের সহাবস্থান যেন সবাইকে বিষ্মিত করে! শুধু তাই নয়, মশা-মাছিরও নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দরটি। এখানে এসে মশার কামড় বা মাছির ভনভনানির অভিজ্ঞতা না নিয়ে ফিরেছেন এমন যাত্রীর দেখা মেলা ভার। বিষয়টা দেশের মানুষের কাছে গা সওয়া হয়ে গেলেও বিদেশিরা এসে হতবাক হচ্ছেন। বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, জাফলং ঘুরে বাংলাদেশের মাটি ছাড়ার আগে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বিমানে চড়ছেন।
বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেও সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে যেন মাথাব্যথাই নেই। মশা-মাছি দূর করতে প্রতিবছর বাজেট হলেও সেই টাকা কোথায় খরচ হয় তা শুধু কাগজ-পত্রের হিসেবেই আছে, বাস্তবে নেই। সন্ধ্যা নামতেই পুরো বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মশা। ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, কাস্টমস হল, গ্রীন চ্যানেল কোথায় নেই মশার উৎপাত। কাস্টমস হলের নিজ নিজ রুমে যিনি বসে থাকেন তারও নিস্তার নেই। বসে মশা মারার কাজেই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে। এছাড়া বিমানবন্দরের কনকর্ড হল, ওয়েটিং রুম সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় বড় বড় বিড়াল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিড়াল একেবারেই কালো যা দেখে অনেক সময় শিশু যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। রাতে উন্মুক্ত ফ্লোরের ওপর দিয়েই এক পাশ থেকে অন্যপাশে দৌঁড়ে পাড়ি দিতে দেখা যায় বিভিন্ন আঁকারের ইঁদুর। নিচতলার এপিবিএন অফিসে কিছুক্ষণ বসলেও চোখে পড়ে ইঁদুর-চিকার ম্যারাথন দৌড়। অনেক সময় তারা স্বল্প সময়ের মধ্যেই অপেক্ষমান যাত্রীর লাগেজে ছিদ্র করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। এছাড়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়েও লাগেজ না পাওয়ার পুরনো সমস্যা তো আছেই। বিষয়গুলো নিয়ে বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ জমা পড়লেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।
সরেজমিন বিমানবন্দর পরিদর্শন করে দেখা গেছে যাত্রীদের এসব দুর্দশা। যেসব যাত্রী শেষরাতের দিকে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তাদের অবস্থা হয় শোচনীয়। ভোর হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরে বসে বসে মশার কামড় খাওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকে না। অবশ্য মশা-মাছির যন্ত্রনা বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও সহ্য করতে হয়। এ ব্যাপারে আলাপকালে কয়েকজন কর্মচারি জানান, তারা তাদের বসকে বিষয়টি অনেকবার জানিয়েছেন। বসরাও উপরের মহলে জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এখানে প্রতিবছরই বিমানবন্দরের আশপাশের ঝোপঝাড় পরিস্কার, মশা-মাছি নিধন, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বড় অংকের বাজেট হয়। বিমানবন্দর মুক্তোর মতো ঝকঝকে রাখতে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়। মাঝে মধ্যে ঝুড়ি, স্যানিটারি কিট নিয়ে ইউনিফর্ম পরা লোকদের দৌঁড়ঝাপ দেখা যায়। কিন্তু সবাই লোকদেখানো। কাউন্টারে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীদের টিকিট চেক করার সময় এক হাত ব্যস্ত রাখতে হয় মশার পেছনে।
এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্তাদের বক্তব্য- বিমানবন্দরের অবস্থা যতটা খারাপ বলা হচ্ছে ততটা খারাপ নয়। মশার জন্য নিয়মিত কীটনাশক দেয়া হচ্ছে, বাথরুম পরিষ্কার-পরিচছন্ন রাখতে সবাই সচেষ্ট। বর্ষার সময় হওয়ায় এখন মশা কিছুটা বেশি। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাছির জন্যও স্প্রে করা হচ্ছে। তাদের মতে বিমানবন্দরের অবস্থা আগে আরও খারাপ ছিল। এখন অনেক উন্নত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বিশ্বের একটি জরিপ সংস্থার প্রতিবেদনে নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় নবম স্থানে উঠে আসে শাহজালাল বিমানবন্দর। এরপর এটা নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়। বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে বিমানবন্দরের পরিবেশ উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে বছর ঘুরলেও বদলায়নি বিমানবন্দরের চিরাচরিত রূপ। দেশের নানা অর্জনের মধ্যেও এক রুগ্ন বাংলাদেশকে উপস্থাপন করছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ মে ২০১৫/ এস আহমেদ