বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশভারি হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ভোর আনুমানিক সোয়া ৬টার দিকে শেরপুর উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ধনকুন্ডিতে যাত্রীবাহী বাস ও পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত আরও প্রায় ২৫ জনকে স্থানীয়রা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন দূরের যাত্রীরা।
জানা যায়, ঢাকাগামী একটি পাথরবোঝাই ট্রাক বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধনকুন্ডি নামকস্থানে পৌঁছালে দিনাজপুরগামী রেখা এন্টারপ্রাইজ নামের বিপরীতমুখী একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের ৭ জন পুরুষ যাত্রী নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জন ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ২ জন মারা যান। শজিমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো প্রায় ২৫ জন বাসের যাত্রী। দুর্ঘটনার পর থানা স্থানীয় জনগণ, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন-দিনাজপুর পৌরশহরের বালুডাঙার নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে নাজমুল সরকার (৪০), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর চৌধুরীপাড়ার খলিলুর রহমানের ছেলে বেনজির রহমান (৪৫), দিনাজপুর সদর উপজেলার খোদমাধবপুর মিস্ত্রীপাড়ার মৃত আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে পারভেজ আলম (৩৫), টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজলার জোড়বাড়িয়া গ্রামের মালেক উদ্দিনের ছেলে ট্রাক চালক ভোলা মিয়া (৪২), দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার তপনঘাট গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে বাস চালক শামীম হোসেন বেলাল (৪০), একই উপজেলার ছাবেদগঞ্জ গ্রামের তাজবর রহমানের ছেলে তজিরুল ইসলাম (৩৬), আমবাগান গ্রামের শাহ আলমের ছেলে দুলাল হোসেন (৩৬), একই জেলার বিরামপুর উপজেলার দোগাছি গ্রামের শফি মন্ডলের ছেলে আব্দুল হাকিম (৪০), জয়পুরহাটের পাঁচবিবির আজিজার রহমানের ছেলে সরোয়ার রহমান (৩৫) ও ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার নুর মোহাম্মদের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩৮)।
আহতরা হলেন দিনাজপুরের মোখলেছুর রহমান (৫৫), বিরামপুরের আবির উদ্দিন (২৪), একই এলাকার আব্দুল লতিফ (২৫), দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের রেজাউল আলম (৩০), রংপুরের পীরগঞ্জের শাহিন আলম (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৪০), আসাদ (৩০), গাইবান্ধার সাঘাটার শফিকুল ইসলাম (৩০), চাঁদপুরের নূর মোহাম্মদ (২৮), ঠাকুরগাঁয়ের আব্দুল লতিফ (৩০), গাইবান্ধার সাঘাটার এরশাদ (২৮), একই এলাকার শফিকুল ইসলাম (৩৫), দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের শাহানুর আলম (৩০), টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের জাফর (২২), দিনাজপুর সদর উপজেলার আইয়ুব আলীর (৬০)। বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের উপর যাত্রীবাহিবাসটি আড়াআড়িভাবে পরে থাকায় উভয়পাশে যানবাহন চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের উভয় পাশে দূর পাল্লার যানবাহন আটকে পড়ে থেকে যানজটের সৃষ্টি করে। থানা পুলিশের সহযোগিতায় ২ ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান, পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ইসরাফিল হাওলাদার, জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি বি-সার্কেল) গাজিউর রহমানসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বগুড়ার শেরপুর থানার ওসি খান মো. এরফান জানান, নিহত ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যানবাহন চলাচল করছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বগুড়ার শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের স্টেশন অফিসার সোহেল রানা জানান, যাত্রীবাহী বাস ও পাথরবাহি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ জুন, ২০১৬/মাহবুব