বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ এখনো আওয়ামী লীগ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে বলে একটি জনমত জরিপে উঠে এসেছে। ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে এ জনমত জরিপ চালায় দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও রিসার্চ ডেভলপমেন্ট সেন্টার (আরডিসি)।
এই জরিপের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে সন্তুষ্ট ও সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে আশাবাদী।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের প্রতি জনসমর্থন বেশি। সেই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার তুলনায় জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জরিপ অনুসারে দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জ্বালানী ও বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে ১ হাজার ৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশের নাগরিকের কাছ থেকে ফোনে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এই জনমত জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ ভাগ মানুষ মনে করেন তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ২৪.৫ ভাগ মানুষ তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেনি বলে জানায়। জীবনমান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান ১১.৪ ভাগ উত্তরদাতা।
পারিবারিক আর্থিক উন্নয়ন ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায় ৫৪.৫ ভাগ মানুষের কাছে। অন্যদিকে আয় বাড়েনি বলে জানান ২৫.৫ ভাগ মানুষ। পূর্বের কয়েক বছরের তুলনায় পারিবারিক আয় একই আছে বলে মতামত দেন ১৯.৯ ভাগ।
বর্তমানে নিজ পরিবারের ক্ষেত্রে শারীরিক বা সার্বিক নিরাপত্তা বেড়েছে বলে মতামত দিয়েছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। ৬৩ ভাগ মনে করেন তাদের পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা বেড়েছে। ১৬.৯ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন তাদের নিরাপত্তা হ্রাস পেয়েছে। ২০ ভাগ উত্তরদাতা জানান তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অপরিবর্তিত আছে।
দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ৬৮.৬ ভাগ মানুষ জানান, সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে না বলে জানান ১৩.৭ ভাগ মানুষ। অন্যদিকে এ বিষয়ে উত্তর দেননি বা উত্তর নেই বলে জানান ১৭.৭ ভাগ উত্তরদাতা।
এদিকে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য করা প্রশ্নে ৫৬.৯ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে 'ভালো' মত প্রদান করেন। বিএনপির পক্ষে 'ভালো' মত প্রকাশ করেন ১৮.৫ ভাগ উত্তরদাতা। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সম্পর্কে 'ভালো' মত প্রকাশ করেছেন ১৫ ভাগ।
আওয়ামী লীগের বিষয়ে 'খারাপ' মত প্রকাশ করেন মাত্র ২.৬ ভাগ উত্তরদাতা। বিএনপি সম্পর্কে 'খারাপ' মত প্রদান করেন ৪৪.১ ভাগ। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির বিষয়ে নেতিবাচক মতামত প্রদান করেন ২৫.৪ ভাগ উত্তরদাতা।
এই মুহূর্তে নির্বাচন হলে কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দেবেন জানতে চাইলে উত্তরদাতাদের ৩৬.১ ভাগ জানান, আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন। অন্যদিকে বিএনপিকে ভোট দেবেন বলে জানান ৩.৫ ভাগ। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির পক্ষে ১.২ ভাগ এবং জামায়াত-ই-ইসলামকে ভোট দেবে বলে জানান ০.৪ ভাগ উত্তরদাতা।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের জরিপ এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চালানো জনমত জরিপের ফলাফল বেশ কাছাকাছি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চালানো ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের জরিপ অনুসারে তখন আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চেয়েছিলেন ৩৮ ভাগ উত্তরদাতা। সেখানে বিএনপির পক্ষে ছিল মাত্র ৫ ভাগ ভোট। ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-ই-ইসলামকে নিয়ে বিএনপির চার দলীয় জোট সরকারের কার্যাবলী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের চেষ্টায় জামায়াতকে সমর্থন এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে নির্বাচনকালীন ও তার পরবর্তী বছরে রাস্তায় সাধারণ মানুষের ওপর চালানো অত্যাচারকে বিএনপির জনপ্রিয়তা হ্রাসের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান জরিপ পরিচালনাকারীরা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই জরিপ প্রতিবেদন অনুসারে ৪৯.৭ ভাগ মানুষ এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তারা কাকে ভোট দেবে। ৭.৫ ভাগ মানুষ কাকে ভোট দেবেন তা জানাবে না বলে উত্তর দেন। অন্যদিকে ১ ভাগ মানুষ জানান, তারা ভোট প্রদান করবেন না।
উল্লেখ্য, বিএনপির সমর্থনে থাকা ভোটারদের একটি বড় অংশ বর্তমানে তাদের ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।
এছাড়া, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দলীয় প্রধানদের জনপ্রিয়তা। ইন্ডিপেন্ডেন্টের জরিপ অনুসারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে 'ভালো' মত প্রদান করেছেন ৭২.৩ ভাগ উত্তরদাতা। অন্যদিকে ২৬.৬ ভাগ উত্তরদাতা 'ভালো' মত প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে। এদিকে শেখ হাসিনা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন ২ ভাগ মানুষ। অন্যদিকে ১৩.৬ ভাগ মানুষ খালেদা জিয়া সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য প্রদান করেন।
জরিপে অংশ নেয়া অধিকাংশ মানুষ জানান, তাদের মতে দেশের সবচাইতে বড় সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাস্তা, ট্রাফিক জ্যাম, যাত্রী ছাউনির অভাব, সড়ক দুর্ঘটনাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় তারা উল্লেখ করেন। উত্তরদাতাদের ৪৮.৩ ভাগ এটি সমাজের প্রধান সমস্যা হিসেবে মত দেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উচ্চ মূল্য। ৪১.৭ ভাগ মানুষ এই বিষয়টিকে প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করেন।
বিডি প্রতিদিন/১০ জুন ২০১৭/এনায়েত করিম
