রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (এসকাপ)-এর এশিয়া প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের (এপিআইএস) স্টিয়ারিং কমিটির দুই দিনব্যাপী অধিবেশন বুধবার শুরু হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সেই ঘোষণাকে বাস্তবতায় রূপ দেয়ার মাধ্যমে গত নয় বছরে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে আজ অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। এই খাতকে এগিয়ে নেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের (এপিআইএস) মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশই নয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোও উপকৃত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, 'ভাবতেই ভালো লাগছে যে, আমি এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে আইসিটি ব্যাকবোনকে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব করেছিলাম। এসকাপ কমিটি অন আইসিটি আমার সে প্রস্তাব গ্রহণ করার মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিক ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে (এপিআইএস) উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশকে এই এপিআইএসের ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি নির্বাচিত করে।'
তিনি আরও বলেন, 'এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে জাতিসংঘের এসকাপভুক্ত সকল দেশ মিলে এপিআইএসের ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এপিআইএসের এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এপিআইএস স্টিয়ারিং কমিটি আগামী দুইদিনে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র সমন্বয় এবং বাস্তবায়নের কার্যকর উপায় বের করতে সক্ষম হবে বলে আমি আশাবাদী।'
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের সকল নাগরিককে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে চলেছি। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সবার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হব।
অধিবেশনে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসাইন, ইউএনএসকাপের প্রোগ্রাম ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিংয়ের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হং জো হাম, এপিআইএস ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও আইসিটি অধিদফতরের মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক বক্তব্য রাখেন।
গত বছর ২৯-৩০ অগাস্ট চীনের গুয়াংজুতে এপিআইএস ওয়ার্কিং গ্রুপের দ্বিতীয় সভায় বাংলাদেশকে এক বছরের জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক এপিআইএস ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
স্টিয়ারিং কমিটির অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লার্ন এশিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান।
এপিআইএসের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্টিয়ারিং কমিটির এই অধিবেশনে জাতিসংঘের এসকাপভুক্ত ৫৬ দেশের প্রতিনিধিসহ দেশি-বিদেশি শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছে।
অধিবেশনে এপিআইএসের মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত কানেক্টিভিটি, ইন্টারনেট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, ই-রেসিলিয়েন্স এবং ব্রডব্যান্ড ফর অল- এই চার স্তম্ভ মধ্যবর্তী মেয়াদে (২০১৬-১৮) বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
অতিথির বক্তব্যে ইউএনএসকাপ এর প্রোগ্রাম ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং এর ডেপুটি এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি হং জো হাম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় বলেই তা আজ অনেকে দেশ গ্রহণ করেছ। ফলে বাংলাদেশ আজ অন্যান্য দেশের কাছে রাইজিং স্টার।
এপিআইএস ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও আইসিটি অধিদফতরের মহাপরিচালক বনমালী ভৌমিক স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এপিআইএস এর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা মাথাপিছু নিম্ন ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারকারী স্বপ্লোন্নত দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে মাথাপিছু ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পাবে এবং তা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে ট্রান্সপোর্ট ডিভিশনের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসাইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সুশান্ত কুমার সাহা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনোয়ার আহমেদ ও লার্ন এশিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বক্তব্য রাখেন।
বিডি প্রতিদিন/০১ নভেম্বর ২০১৭/এনায়েত করিম