সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে পার্টির কর্তৃত্ব কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এ নিয়ে দলটির ভেতরে চলছে ঠাণ্ড লড়াই। আপাতদৃষ্টিতে সহোদর জিএম কাদেরকে এরশাদের অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হলেও দলের ভিতরে থাকা কয়েকজন সিনিয়র নেতা এরশাদের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে চলেছেন। তারা চাচ্ছেন পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান বানাতে।
এদিকে জি এম কাদেরকে পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে, তৃণমূলে স্বস্তি বিরাজ করলেও পার্টিতে জিএম কাদের বিরোধীরা এখনও সক্রিয় থাকার ফলে বিরাজ করছে ঠাণ্ডা লড়াই।
গত ৪ এপ্রিল সহোদর জিএম কাদেরকে পুনরায় পার্টির ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করার পর থেকে পার্টির নেতাকর্মীরা এরশাদের বাসবভন প্রেসিডেন্ট পার্কে পাহারা অব্যাহত রেখেছেন, যাতে করে কাদের বিরোধীরা এরশাদকে দিয়ে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারে। এরশাদ নিজেও শেষ বয়সে নিজ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে সহোদর ভাইকে পার্টির উত্তরাধিকার হিসেবে দেখতে চান। যার কারণে পার্টিতে কাদের বিরোধীদের পাত্তা দিচ্ছেন না এইচ এম এরশাদ।
সম্প্রতি জাপার দুই প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরের বিষয়টি পরিবর্তনের জন্য এরশাদের বাসভবনে গেলে তিনি তা প্রত্যাখান করে সেই দুইনেতএক ভাৎর্সনা করেন। এদিকে হাল ছাড়ছেন না জিএম কাদের বিরোধীরাও। তারা গুলশানে একাধিক বাসায় দফায় দফায় বৈঠক করছেন। যদিও তাদের মাঝে বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে দলের বৃহত্তর স্বার্থে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমি বারবার বলেছি, এ পার্টিতে পল্লীবন্ধু এরশাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি ইতিমধ্যে জানিয়েছেন কে হবে পার্টির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। যদিও এটা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানারকম আলোচনা আছে। কিন্তু পার্টির বৃহত্তর স্বার্থে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত।
পার্টির অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, প্রেসিডিয়াম থেকে শুরু করে পার্টির সকল পদ-পদবী আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বাক্ষরে পেয়ে থাকি। পার্টিতে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জিএম কাদেরের বিষয়েও তিনি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা যদি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করি তাহলেই পার্টির জন্য মঙ্গলজনক।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস দেখলে আমরা বুঝতে পারবো এ দেশে পরিবারের বাইরে কোনো পার্টি টিকে থাকতে পারেনি। মুসলিম লীগ ও জাসদও আজ হারিয়ে যাচ্ছে। যারা এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে নেতা বানানোর চেষ্টা করছেন তারা প্রকৃতপক্ষে এরশাদ ও জাতীয় পার্টির মঙ্গল কামনা করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ছাত্রনেতা ও পার্টির ভাইস-চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পার্টিতে রাজনৈতিক কোনো দ্বন্দ্ব নেই, আছে পারিবারিক কোন্দল। আর এ কোন্দলে পার্টির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জড়িত থাকলেও তৃণমূল অথবা মধ্যম সারির কোনো নেতাকর্মীই এ দ্বন্দ্বের মাঝে নেই। সিনিয়র নেতারাই সিদ্ধান্ত নিয়ে এইচ এম এরশাদকে বিভ্রান্তির মাঝে ফেলেন।
জিএম কাদের মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় পার্টি এক বড় দল ও সংসদের প্রধান বিরোধীদল। এখানে পদ-পদবীর জন্য প্রতিযোগিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পল্লীবন্ধু এরশাদ আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন আমি পার্টির সকল সিনিয়র নেতাদের পরামর্শক্রমে সকলের সমন্বয়ে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। সকলে এক টেবিলে বসলে অনেক বিভেদ ও সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ এপ্রিল, ২০১৯/মাহবুব