সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় সদস্যরা বলেছেন, এখন বাজেটের টাকা তারেক রহমানের হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয় না বলেই দেশের সবক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদে থেকে খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। শিক্ষাখাতে বিএনপির শেষ বাজেটের পরিমাণের দশগুণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতির সম্মৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক শান্তি দরকার। শেখ হাসিনা সরকারকে অনেক মূল্য দিয়ে তা অর্জন করতে হয়েছে। তাই শান্তির শত্রু অশান্তির হোতাদের কোন ছাড় নেই, দমন এদের করতেই হবে।
তবে সরকারের শরিক ও বিরোধী দলের সদস্যরা বাজেটে প্রতিবছরই ঘাটতি বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। কিন্ত এসব প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেই। কৃষিখাতে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে। শিক্ষাখাতে সঠিক নজর দেয়া হয়নি। বাজেটে ধনীদের সুযোগ দেয়া হলেও দরিদ্রদের সুযোগ দেয়া হয়নি। তারা ঋণ খেলাপী কমিয়ে আনার এবং দুর্নীতি ও অপচয়ের রাষ্ট্রীয় খাত থেকে এ বাজেটকে রক্ষা করার দাবি জানান।
সোমবার সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা এসব কথা বলেন।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ব্যক্তি আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ করা, ধনীদের সম্পদের সার চার্জের পরিমাণ আড়াই থেকে ৩ কোটি করা হয়েছে, এটা কমিয়ে সোয়া দু কোটি বহাল রাখা দরকার। বাজেটে ধনীদের সুযোগ দেয়া হলেও দরিদ্রদের সুযোগ দিতে হবে। ঋণ খেলাপী কমিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন, দুর্নীতি ও অপচয়ের রাষ্ট্রীয় খাত থেকে এ বাজেটকে রক্ষা করতে হবে। জাসদ সভাপতি আরো বলেন, বাজেটে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়ে গত ১০ বছরে খুব একটা সুবিধা হয়নি। অর্থনীতির কোন প্রভাব পড়েনি। এটা অনৈতিক ও সংবিধান পরিপন্থি, তাই কালে টাকা সাদা করার প্রস্তাবটা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সকল যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্তির জন্য যে ৪টি ক্রাইটেরিয়া ধরে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়েছিলো তার ভিত্তিতে এমপিও’র জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়েছে। একজন শিক্ষকের পরিচয় তার প্রতিষ্ঠানের পারফরমেন্স দিয়ে বিবেচিত হয়। যোগ্য বিবেচিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।
ডা. দিপু মনি বলেন, শিক্ষাখাতে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বাজেট বিএনপির শেষ বাজেটের পরিমাণের দশগুণ। বিএনপি যদি অবকাঠামোর উন্নয়ন করতো তাহলে অকাঠামোর উন্নয়নের দিক থেকে আমরা এগিয়ে থাকতাম। আজ অবকাঠামোর উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বেশী দিতে হতো না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা বরাদ্দ আরও বেশী দিতে পারতাম। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তারা ইনডেমিনিটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলো। তাদের মুখে আইনের শাসনের কথা মানায় না। তাদের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কালো টাকা সাদা করেছিলো। এখন বাজেটের টাকা তারেক রহমানের হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয় না বলেই দেশের সবক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। বাজেট শুধু বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, দেশের কল্যাণে সরকারের দর্শন ফুটে উঠে বাজেটে। তবে করের আওতা অবশ্যই সহনীয় মাত্রায় বাড়াতে হবে। অনেক মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ কেন বাস্তবায়ন করতে পারছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কে কি সমালোচনা করলে সেটি দেখলে হবে না। বিএনপি এখন কোথায়, তারা তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গোটা জাতিকে নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর বিচার বিভাগের জন্য বাজেট আরও বাড়াতে হবে। বিচারকের বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে। মামলাজট নিরসনে বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। হাইকোর্টে আরও একশ’জন বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন।
আইপিইউ’র সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জিডিপি, প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়লেও ধনী-গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। বেকারত্বের হার কমছে না। শিক্ষিত বেকারের হার অনেক বেশি, ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। সময় এসেছে বেকার ভাতার চালুর চিন্তা করা। মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেই প্রায় ১০ লাখ বেকারকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নারীর ক্ষমতায় চোখে দেখার মতো। তবে দুর্নীতিতে নারীরা পিছিয়ে আছে, এটা একটা শুভ সংবাদ। বিশাল একটি তরুণ প্রজন্ম উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়েছে। উন্নত দেশে এটা পজেটিভ হিসেবে দেখলেও আমাদের দেশে তা নেগেটিভ হিসেবে দেখা হয়। বিশ্বব্যাংকের মাথানত করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন, মহাকাশে নিজ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছেন- প্রধানমন্ত্রীকে এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন