রোহিঙ্গাদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে রাজি বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলছে দুই দিনের সফরে আসেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল। গতকাল শনিবার ও আজ রবিবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এ রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়া মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এছাড়াও যারা ‘দাদা, মা ও সন্তান’ এই তিনের অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। একইভাবে ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) অনুযায়ী কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদেরও নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থোয়ে আরও বলেছেন, ‘দুইদিন ধরে একাধিক বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের প্রস্তুতি সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৩ দফায় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দাবি সমূহ জানা গেছে। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিন ক্ষেত্রে আলোচনা করার। রোহিঙ্গাদের সাথে যে আলোচনা হয়েছে তা আবারো হবে। একই সঙ্গে আসিয়ানের প্রতিনিধিদের সাথেও আলোচনা হবে। আসিয়ানের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মার্চ মাসে দেয়া প্রস্তাবনা বিবেচনা করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া উভয়পক্ষের আলোচনার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত বৈঠক হবে ঢাকায় ফিরে।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি রবিবার সকালে কুতুপালং ৪ নম্বর ক্যাম্পে যান। যেখানে গতকাল ৪০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সাথে তৃতীয় দফায় বৈঠক করেন। টানা ২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সাথে নিজেদের নানা দাবির কথা জানান রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা বলেন, নাগরিকত্ব, স্বাধীন চলা-ফেরার নিরাপত্তা প্রদান করলে তারা স্বদেশে ফেরত যাবেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের কথা শোনেন এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত যাওয়ার আহ্বান জানান। ফেরত গেলে তাদের দাবি সমূহ বিবেচনা করবে বলেও আশ্বাস দেন বলে বৈঠকে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
দুপুরে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গা হিন্দু ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। সেখানে রোহিঙ্গা হিন্দুদের সাথে আলাপ করেন। এ সময় হিন্দু রোহিঙ্গারা কোন দাবি বা শর্ত ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরতে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে মুসলিম রোহিঙ্গাদের মত খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তারাও নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে’র নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শনিবার বিমান যোগে সকাল ১০টায় কক্সবাজার পৌঁছান। প্রতিনিধি দলটি বিমান বন্দর থেকে হোটেল রয়েল টিউলিপে যান। এরপর উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন যান। প্রতিনিধিদলটি কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ৪০ জনের একটি দলের সাথে ২ দফায় আলাপ আলোচনা শুরু করেন। দ্বিতীয় দফার আলোচনায় রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যেতে আহ্বান জানান মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে ফিরে গেলে সেখানে কি রকম সুযোগ সুবিধা পাবেন তার সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এ সময় রোহিঙ্গাদের পক্ষে নানা দাবি উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, বৈঠকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়ালগে সম্মতি জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা।
বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব