১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৮:১১

এবার রাব্বানীর জিএস পদ নিয়েও প্রশ্ন, শোভনের সদস্যপদও প্রশ্নবিদ্ধ!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

এবার রাব্বানীর জিএস পদ নিয়েও প্রশ্ন, শোভনের সদস্যপদও প্রশ্নবিদ্ধ!

ফাইল ছবি

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে গোলাম রাব্বানীর পদচ্যুতির পরে প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে তার সাধারণ সম্পাদক-জিএস ও সিনেটের সদস্যপদ নিয়ে। তার পদত্যাগের ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলো। এমনকি এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হকও।  

তাদের অভিযোগ, দুনীর্তি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় গোলাম রাব্বানীর নৈতিক স্খলন ঘটেছে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অন্যতম শীর্ষ নেতার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন তিনি। ফলে তার উচিত হবে শীঘ্রই সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া। 

প্রসঙ্গত, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ সাংগঠনিক নিয়ম শৃঙ্খলায় ব্যাত্যয় ঘটানোর অভিযোগে শনিবার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ থেকে সরে যেতে হয় রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন গোলাম রাব্বানী। অন্যদিকে, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন নির্বাচনে ভিপি পদে হারলে পরে তাকে সিনেটের সদস্য করা হয়। 

তবে বেশকিছু দিন যাবত তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, মাদক সেবন, দুপুর পর্যন্ত  ঘুমানো, মধুর ক্যান্টিনে না যাওয়া, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা ইত্যাদি। তিন মাসের মাথায় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে শিক্ষা ভবন, খাদ্য ভবন, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ভবনসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর উন্নয়নে টেন্ডারবাজি। 

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে দুই নেতার বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ টাকার চার থেকে ছয় শতাংশ দাবি করার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ভবন স্থানান্তরে টেন্ডারের ভাগ পেতে তুচ্ছ কারণে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার অভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি গুলিস্তানে সংগঠনের কার্যালয়ে মাদকের সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা চলছে গোলাম রাব্বানীর জিএস পদ নিয়ে। একই ঘটনায় অভিযুক্ত শোভনের সিনেটে থাকার যোগ্যতাও নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা। এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, ছাত্রলীগের মত একটি সংগঠনের পদে থেকে তিনি (গোলাম রাব্বানী) চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মত অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ফলে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, একঅর্থে দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। ফলে ডাকসু সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের উচিত হবে তার পদত্যাগের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার। 

ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে এসেছে। সেগুলোর সত্যতা নিয়েও কোন প্রশ্ন নেই। তার নিজেরই উচিত হবে পদত্যাগ করা। তার কৃতকর্ম কোনওভাবেই ডাকসুর মূল চেতনার সাথে যায় না।

এদিকে, আজ রবিবার দুপুরে ডাকসু ভবনের সামনে সমাবেশ করে চাঁদাবাজির ‘অপরাধে’ গোলাম রাব্বানীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, ‘অনতিবিলম্বে এই চাঁদাবাজ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ডাকসুর জিএসের পদত্যাগ দাবি করছি। যিনি দল থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এরকম একজন ডাকসু জিএসকে আমরা চাইনা।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত এক ডাকসু নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও ডাকসু দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ থেকে পদচ্যুতির কারণে অন্যটির পদ থেকে সরে যেতে যাওয়ার কথা ডাকসুর গঠনতন্ত্রেও নেই। তবে নৈতিক কারণে তিনি ডাকসুতে থাকবেন নাকি পদত্যাগ করবেন এটি তার নিজের সিদ্ধান্ত।’

এদিকে, নৈতিক স্খলনের জন্য কোন সদস্যের পদত্যাগের বিষয়ে ডাকসুর গঠনতন্তে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে গঠনতন্ত্রের ৫(এ) অনুচ্ছেদে ডাকসুর সর্বোচ্চ কল্যাণের স্বার্থে কোন সদস্যেকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ডাকসুর গঠনতন্ত্র দেখার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও ডাকসু দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। দুটিই নিজস্ব সংস্কৃতিতে চলবে। বিষয়টি আইনগতভাবে দেখতে হবে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে যেভাবে আছে সেভাবেই করতে হবে।’    


বিডি প্রতিদিন/ তাফসীর আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর