সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশে প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা খাওযার খরচ ২০ কোটি টাকা’ খবর উদ্ধৃত করে স্বাস্থ্যখাতে অপচয় ও দুর্নীতি নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, আজকের খবরের কাগজে দেখতে পাচ্ছি, ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্যকর্মীদের খরচ ২০ কোটির মত হয়েছে। খাবার খরচই হয়েছে প্রায় অর্ধেক। কতটুকু প্রয়োজন ছিল, কতটুকু অপচয় হয়েছে কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে এখন পর্যন্ত জানি না। এসময় তিনি থোক বরাদ্দের ব্যাপারে যথার্থতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ সংক্রান্ত একটি মনিটরিং টিম বা সমন্বয় কমিটি গঠন করার দাবি জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বাজেট অধিবেশনে আজ ২০২-২১ অর্থ বছরের বাজেটের মঞ্জুরী দাবি এবং দায় যুক্ত ব্যয় নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া থোক বরাদ্দ দিলে সাধারণত এডহক বেসিসে যখন যেখানে দরকার তখন সেখানে খরচ করার একটি প্রবণতা থাকে। কত দরকার, কী দরকার সেটা কে নির্ধারণ করবে? এগুলোর ব্যাপারে সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা যায় না।
জিএম কাদের আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগে ব্যয় করবো, পরে আয় করবো। এ কথায় আশ্বস্থ হওয়া খুবই কঠিন। আয় করতে ব্যর্থ হলে নতুন টাকা ছাপিয়ে খরচ মেটানো যায়। যার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিবেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে এরকম বাড়তি ঋণ যদি নেওয়া হয়, তাহলে সাধারণত বিশেষজ্ঞদের মতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে। অর্থনীতি নানা ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাজেট প্রস্তাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দুর্নীতি দমন কমিশন নামের সংস্থা রাখার সঠিক যৌক্তিকতা থাকবে কি না সেটার বিষয়ে সন্দেহ হয়। কারণ দুর্নীতি দমনের প্রধান সূত্র হলো অবৈধ সম্পদ। ব্যাখ্যাহীন সম্পদ বৈধ হলে শাস্তিযোগ্য দুর্নীতি আর থাকবে না। দুর্নীতি দমন কমিশন কী কাজ করবে?
জিএম কাদের আরো বলেন, কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ শুল্ক আয় বৃদ্ধির বড় ধরণের একটি পদক্ষেপ, আমরা মনে করছি ডেসপারেট মুভ। প্রায় সকল মহল থেকে প্রতিবাদ আসছে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে এটাতে শুধুমাত্র সুনাগরিকদের আইন ও নীতির প্রতি আনুগত্যকে নিরুৎসাহিত করা হবে না, এই সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় নানা শর্তে এই সুযোগ চালু ছিল, এখনও আছে। তবে এত ঢালাওভাবে, শুধু কিছু অর্থের বিনিময়ে সকল ধরণের অপকর্ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বৈধতা দেওয়ার সুযোগ কখনও ছিল কি না সন্দেহ হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে যেটা দেখা যায় এতে খুব বেশি লাভের সম্ভব হয় না।
জিএম কাদের আারো বলেন, বাজেটে কিছু কিছু খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও সেটা পর্যাপ্ত হয়নি বলে সমালোচনা আছে। সেই বরাদ্দ পর্যাপ্ত করার জন্য থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাজেট প্রণয়ন করা যায়নি। সেকারণে হয়তো অর্থমন্ত্রী অনুমানভিত্তিক কিছু বৃদ্ধি, থোক বরাদ্দ দিয়ে বাজেট সাজিয়েছেন।
বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। ঘাটতি কমাতে হলে ব্যয় কমাতে হবে। আয় বাড়াতে হবে। পরিচালন ব্যয় কমানো কঠিন কাজ। তবুও যতটা সম্ভব কৃচ্ছতা সাধনের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়ন ব্যায়ে কিছুটা কাটছাঁট করে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় বাড়তি অর্থায়নের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, উন্নয়ন ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ণয় করা খুবই কঠিন কাজ। মেগা প্রকল্প সবগুলো চালু রাখা হবে কি না, কোনটি রাখা হবে, কোনটি স্থগিত রাখা হবে, কোনটি সীমিত রাখা হবে সেটি নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। ইচ্ছা করলেই সবসময় পারবো না। করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল। প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম রাজস্ব আদায়ের আশংকা রয়েছে। ট্যাক্স কোথা থেকে আসবে। বড় ধরণের ঘাটতি আরও বৃদ্ধি পেতে পাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল