করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহের কাজ পেয়েছে এক অটোমোবাইল কোম্পানি। সেই কোম্পানির ঠিকানায় অবশ্য কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিনের মধ্যে পিপিই-মাস্ক-গ্লাভস সরবরাহ করার কথা থাকলেও ৮৪ দিন পর্যন্ত একটি পণ্যও সরবরাহ করেনি। অথচ ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি। এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে জাদিদ অটোমোবাইলস নামের একটি কোম্পানি। এসব বিষয়ে জাদিদের মালিক যেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি, তেমনি প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছেও মেলেনি এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন পায় ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স আন্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি)’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ- ৮৫০ কোটি টাকা অর্থায়ান করছে বিশ্বব্যাংক। এই প্রকল্পেই ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকার পিপিই সরবরাহের কাজ পায় জাদিদ অটোমোবাইলস।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯ মে ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জাদিদ অটোমোবাইল নামের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি হয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের। চুক্তিনামা অনুযায়ী ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় জরুরি ভিত্তিতে ৫০ হাজার পিস কাভারঅল পিপিই, ৫০ হাজার পিস কেএন-৯৫ মাস্ক, ৫০ হাজার পিস এন-৯৫ মাস্ক ও এক লাখ পিস হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহের অনুমতি পায় জাদিদ অটোমোবাইলস। এর জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৪৫ দিন। তবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৮৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো একটি সুরক্ষা সরঞ্জামও সরবরাহ করতে পারেনি বলে জানা গেছে। অথচ ৩০ জুনের আগেই জাদিদ অটোমোবাইলস প্রকল্প থেকে সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহের ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা তুলেও নিয়েছে!
অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে চুক্তিনামার একটি নথি পাওয়া যায়। বেশকিছু অসঙ্গতি দেখা যায় এই চুক্তিনামায়। এতে জাদিদ অটোমোবাইলসের ৫০ হাজার পিস কাভারঅল পিপিই সরবরাহের কথা থাকলেও সেটি কোন লেভেলের হবে, তা উল্লেখ নেই। অথচ স্বাস্থ্য খাতের সব প্রকল্পেরই পিপিই সরবরাহের ক্ষেত্রে মানের বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ থাকে।
চুক্তিনামায় জাদিদের সঙ্গে প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন অংশেও অসঙ্গতি দেখা যায়। যেমন— বলা হয়েছে, চুক্তি সইয়ের পর ১৫ দিনের মধ্যে আগাম অর্থ দেওয়া হবে জাদিদকে। এর পরিমাণ কথায় লেখা আছে ২০ শতাংশ, অঙ্কে ৩০ শতাংশ। আবার পণ্য সরবরাহ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধের কথা বলা আছে কথায় ৭০ শতাংশ, অঙ্কে ৬০ শতাংশ। চুক্তিনামায় প্রকল্প পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়নি।
সূত্র বলছে, এই চুক্তিনামার ভিত্তিতেই জাদিদ সাড়ে ৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে সুরক্ষা সরঞ্জামগুলো সরবরাহের জন্য। তবে চুক্তি অনুযায়ী ৪৫ দিন তো দূরের কথা, ৮৪ দিনেও তারা একটি পণ্যও সরবরাহ করতে পারেনি।
তবে ১৪ এপ্রিল জাদিদ অটোমোবাইলসের মালিক শামীমুজ্জামান কাঞ্চন দাবি করেন, ৭০ শতাংশের মতো পিপিই তারা সরবরাহ করেছেন। তবে এসব পণ্য কোথায় সরবরাহ করা হয়েছে— সে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্টোর সূত্রও জানাচ্ছে, এই প্রকল্পের আওতায় কোনো নিরাপত্তা সুরক্ষা সামগ্রী তারা বুঝে পাননি। এসব পিপিই স্বাস্থ্য অধিদফতরের পণ্য মজুদের তালিকায় এরই মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। পণ্য বুঝে না পেয়েও কীভাবে ওয়েবসাইটে এন্ট্রি দেওয়া হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পের স্টোর কর্মকর্তা মীর্জা মাসুদ বলেন, আমাকে স্যাররা বলেছেন। তাই এন্ট্রি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পিপিই আমি পাইনি। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা