মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ শাখা কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করার চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। বর্তমান কমিটির নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত সক্রিয় নেতাদের নিয়ে ছোট পরিসরে এ কমিটি হবে। এ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সংখ্যা হতে পারে ৪১ বা ৫১।
আহ্বায়কের সঙ্গে কোনো সদস্য সচিব না করে কমিটিতে ৭ বা ১১ সদস্যের যুগ্ম আহ্বায়ক করা হতে পারে। অন্যরা সদস্য হিসেবে থাকবেন। গত বেশ কিছুদিন ধরে দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা এ কমিটি গঠন নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার কথা শোনা যাচ্ছে।
চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কমিটি গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ঢাকা মহানগরসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটিই পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। করোনাকালে সাংগঠনিক কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত ছিল। এখন আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যথাসময়ে ঢাকা মহানগরে দুই শাখার কমিটি হবে।’
সম্প্রতি দেশের ১২টি মহানগরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়টি তদারকি করছেন। এ নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথাও বলছেন।
দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণ শাখায় আহ্বায়কের আলোচনায় শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এছাড়া দক্ষিণ শাখার বর্তমান সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন মহানগরের সহ-সভাপতি নবীউল্লাহ নবীও। এক্ষেত্রে যুগ্ম আহ্বায়কের তালিকায় প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব ও রফিকুল আলম মজনুর নাম নেতা-কর্মীদের মুখে রয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নেতৃত্বে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বর্তমান কমিটির সভাপতি এম এ কাইয়ুম ও যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নাম আলোচনায় আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হতে পারে। তবে তিনি মহানগর কমিটিতে থাকতে চান না বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া উত্তর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু ও মোয়াজ্জেম হোসেনের নামও বলছেন কেউ কেউ।
একটি সূত্র এটাও বলছে, দক্ষিণে হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও উত্তরে এম এ কাইয়ুমকে কিছু দিনের জন্য আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এরপর তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে বিদায় নিতে পারেন ঢাকা মহানগরের রাজনীতি থেকে। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আহ্বায়ক কমিটি হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে কমিটি না হলে সেক্ষেত্রে কমিটি গঠনে আরও অন্তত দুই-তিন মাস সময় নিতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানা যায়, ঢাকাসহ অন্য সব মহানগরের কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চান তারেক রহমান। যাকে কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে বিদায় নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পদক প্রার্থী হতে পারবেন না। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ শাখাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
মহানগর উত্তরে এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি নিয়ে দলের ভিতরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। উত্তর বিএনপিতে এখনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর মেয়াদি এ কমিটির শেষ হয়ে গেছে প্রায় দেড় বছর আগে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে আহসান উল্লাহ হাসান মারা যাওয়ায় গত ২২ জুন সহসভাপতি আবদুল আলীম নকীকে মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এদিকে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কূটনৈতিকপাড়া গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা চেজারকে গুলি করে হত্যা মামলায় আসামি হয়ে কমিটি গঠনের আগেই বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম দেশ ছাড়েন। তার বিরুদ্ধে ওই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযোগ আনা হয়। মহানগর দক্ষিণের হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। উভয় কমিটি ঘোষণাকালে নির্দেশনা ছিল, এক মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। আংশিক কমিটিতেই মেয়াদ পার করে তারা। ওয়ার্ড বা থানা পর্যায়েও নেই কমিটি। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুসছেন তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
মহানগরের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলনকে সামনে রেখে আগামীতে কমিটি গঠন করা উচিত। সেক্ষেত্রে ঢাকার অধিবাসীসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করা উচিত। ওপর থেকে কোনো চাপিয়ে দেওয়া কমিটি যেন দেওয়া না হয়। কোনো বিতর্কিত বা আন্দোলন সংগ্রাম থেকে পালিয়ে থাকা কাউকে যেন শীর্ষ নেতৃত্ব দেওয়া না হয় সে ব্যাপারে তারা তারেক রহমানের কাছে প্রত্যাশা করেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত