করোনাকালে দেশের কর্মহীন, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় সারাদেশে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাজশাহীর তিন উপজেলার ৯০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
সোমবার রাজশাহীর পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার দরিদ্ররা পেয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা।
বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা পেয়ে তজিবার শেখ নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘করোনার মধ্যে টুকটাক কাম চলে। এটা দিয়া সংসার চালানো কষ্ট হয়। খুব দুঃখে দিন যায়। আজ বসুন্ধরার সহযোগিতা পেয়েছি। তারা চাল, ডাল, আটা দিছে। কিছুদিন খাইতে পারব। তাদের জন্য দোয়া করি।’
ডলি রানী সূত্রধর নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, ‘আমার স্বামী একা ইনকামের মানুষ। কাঠের দোকানে কাম করে। এই টাকায় মেয়েদের পড়ার খরচ দিয়া সংসার চলে না। তোমাদের এই সাহায্যে আমরা ৭-৮ দিন খেতে পারব। তোমাদের গতর ভালো রাখুক। সুখে থাকো।’
চারঘাটে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দেশের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছে। এই সময়ে যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের জন্য এই সহায়তা কিছুদিনের জন্য হলেও উপকারে আসবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে দিন-রাত যারা পরিশ্রম করছেন আপনারা তাদের জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন আপনাদের আবারও সহযোগিতা করতে পারে। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে সবাইকে বেঁচে থাকতে হলে মাস্ক পড়তে হবে। টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র একরামুল হক, কালের কন্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রানা।
সকালে পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ৩০০ পরিবারের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের উপহার তুলে দেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।
বেলপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, 'বসুন্ধরা গ্রুপ আজকে আমাদের এলাকার ২৮টি গ্রামের অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। তাই আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তারা যেন সামনেও আমাদেরকে সহযোগিতা করতে পারে সেজন্য সবাই দোয়া করবেন।'
বাঘা উপজেলার মানিকের চরে থাকেন কফির উদ্দিন শেখ। কয়দিন আগে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তার ভিটেমাটি। এখন বাঁশের মাচায় পরিবার নিয়ে ঠাঁই জুগিয়েছেন। সঞ্চয়ে সামান্য কিছু চাল, ডাল দিয়ে দু’মুঠো খাচ্ছেন। তবে তাও এখন ফুরিয়ে যাওয়ার অবস্থায়। ভিটেমাটি হারিয়ে তার মত অনেক পরিবার এখন মাচাতেই আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া এসব পরিবারকেও খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। সহায়তা পেয়ে কফির বলেন, 'আমরা এহন নিঃস্ব। এই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ চাল, ডাল দিছে তা আমাদের অনেক উপকার হইছে। আল্লা তারে ভালোবাসুক। তাদের আরও বাঁচায়া রাখুক।' আবু তাহের মোল্লা নামের আরেক উপকারভোগী বলেন, 'নদীতে আমাদের সব ভেসে গেছে। এহন এই সাহায্য আমাদের অনেক দরকার। কিছুদিন শান্তিতে খাইতে পারব।'
পাকুড়িয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, 'দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আছে। কিন্তু মানুষের কল্যাণে খরচ করার মতো মানসিকতা বসুন্ধরা গ্রুপ দেখিয়েছে। তারা সারাদেশে দুই লাখের বেশি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। আমাদের এলাকার নদীভাঙন কবলিত ৩০০ পরিবারকেও সহায়তা দিয়েছে। তাই তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। তারা যেন আপনাদের আরও সহায়তা করতে পারে।'
খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সব কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কালের কন্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান।
এনিয়ে গত তিনদিনে রাজশাহীর ৯ উপজেলা ও নগরীতে ৩ হাজার কর্মহীন দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটালো বসুন্ধরা গ্রুপ।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন