বিএনপি নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই অর্থ পাচার করে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়েছে।
এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিএনপি বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেনি। বরং আওয়ামী লীগ নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ২০০৪ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে অর্থের বিনিময় চুক্তি করে। আওয়ামী লীগের এই অর্থের উৎস ও লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বিএনপির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোশররফ বলেন, ‘সরকার অভিযোগ করেছে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। তারা আরও বলেছে যে, দেশ থেকে কীভাবে অর্থ প্রেরণ করেছে। আমরা চাই যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইনকোয়ারি করুক। তাদেরটাও (আওয়ামী লীগ) ইনকোয়ারি করুক। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি বাংলাদেশ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করেনি। তার জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ কোথাও যায়নি। প্রবাসীরা এদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়ে সেসব দেশে বিক্ষোভ কিংবা নিজেদের মনের কথা সেখানকার প্রতিনিধির কাছে বলতে পারেন।’
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের সদস্য ও মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাত করে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরার কথা উল্লেখ করেন তৎকালীন যুক্তরাজ্য ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ।
তিনি বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীদের দাবি তারা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, একটা জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্য প্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’কে নিয়োগ দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে আওয়ামী লীগের একজনকে মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন।’
ড. মোশাররফ বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এই জুলুমবাজ অবৈধ সরকার যে অপরাধ করেছে তা ধামাচাপা দিতে লবিস্ট নিয়োগে নিপীড়িত দেশবাসীরই ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করছে। জনগণের এই অর্থ ব্যয় করে সরকার ও সরকারি দল লবিস্ট নিয়োগের নামে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে এবং তার উৎস কী? স্বচ্ছ তদন্ত করে তার রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির দুইটি লবিস্ট ফার্ম ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’ এবং ‘ফ্রিডল্যান্ড’ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের এক নেতার চুক্তির তথ্য প্রমাণও তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘বহুবছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফি’তে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রিডল্যান্ডারকে। এই ব্যাপারে কেঁচো খুড়তে গেলে আরও বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘সরকার দিশেহারা হয়ে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ সংক্রান্ত বানোয়াট বক্তব্য দিচ্ছে। বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারের ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি। সরকারের দুই মন্ত্রী গায়েবি তথ্য দিয়ে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে ফেঁসে গেছে। বিএনপি লবিস্ট নিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং সরকারের লবিস্ট নিয়োগের তথ্য গোপন করায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো সব তথ্য আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি। সত্য তো এই যে, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি। লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছে তা বাটোয়াট।’
তিনি বলেন, ‘লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না-প্রকাশ্যে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যেসব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মাঝে বিলি করেছেন তাতেও কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেত্বৃৃন্দ প্রকাশ্যে বলেননি। বা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। এসব বক্তব্যের কোনোটাই জনগণের কিংবা দেশের স্বার্থ বিরোধী নয়ই; বরং জনগণ ও দেশের পক্ষে বিএনপির নৈতিক অবস্থান ও দায়িত্বের প্রকাশ। এসব বক্তব্য জনগণের কাঁধে অন্যায়ভাবে চেপে বসা সরকারের বিরুদ্ধে হতে পারে এবং সেটাই অনিবার্য স্বাভাবিক ও অব্যাহত রাখার যোগ্য।’
দূতাবাস থাকা সত্বেও আলাদা করে লবিস্ট নিয়োগ অনৈতিক উল্লেখ করে মোশাররফ বলেন, ‘যেখানে আমাদের বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যেকটা দেশে দূতাবাস আছে, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস আছে। এগুলো কীসের জন্য? বাংলাদেশের পক্ষে, বাংলাদেশের যে ঘটনাবলীর পক্ষে ওইসব দেশকে অবহিত করা এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। সেখানে সরকার বা সরকারি দল কেন লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে? সেটাই প্রশ্ন। দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও এভাবে জনগণের অর্থ খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ অনৈতিক।’ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সরকারের লবিস্ট নিয়োগের খবরের কাটিংও উপস্থাপন করেন খন্দকার মোশাররফ।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ