নওগাঁ প্রথম শ্রেনির পৌরসভা। তারপর দীর্ঘদিন থেকে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হয়ে আসছে পৌরবাসী। নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন না করে অযৌক্তিকভাবে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এরই প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টায় নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পৌর ভবনের সামনে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।
১৯৮৯ সালে নওগাঁ পৌরসভা প্রথম শ্রেনিতে উন্নীত হয়। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভা। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হওয়ার পরও এর বাসিন্দারা নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, খানাখন্দ ও ভাঙা রাস্তায় চলাচলে জনদুর্ভোগ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকা এবং সন্ধ্যার পর আলো (লাইটিং) ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসীকে দীর্ঘদিন থেকে দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। নাগরিক সেবা বঞ্চিত হওয়ার পরও উল্টো পৌরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে।
পৌরবিধি মোতাবেক ৫ বছর পর পর পৌরকর বৃদ্ধি করা হয়। গত ৮ জুলাই পৌরকর বৃদ্ধির বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে পৌর প্রশাসক সংবাদ সম্মেলন করেন। যেখানে পানির বিল ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা ও অন্যান্য কর ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা পৌরকর বৃদ্ধি না করতে দ্বিমত পোষণ করে। তবে বকেয়া পৌরকর আদায়ের ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীরা তাগিদ দিয়েছেন। পৌরসভার উন্নয়ন সবাই চাই। সেবার মান বৃদ্ধি না করে পৌরকর বৃদ্ধি অযৌক্তিক। পৌরবাসীকে করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব না।
শিক্ষক জাহিদ রাব্বানি বলেন, গরীবরা টাকা দিতে পারে না আবার কথাও বলতে পারে না। তাদের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। এটা এক ধরনের বৈষম্য। কর পরিশোধে পৌরবাসীকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত কর যাচাই-বাছাইয়ে ৫০ টাকা খরচ করে আবেদন করতে বলা হচ্ছে। এটা কি ধরণের যৌক্তিকতা।
পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল বাশির বলেন, এক বছর আগেও বাসাবাড়ির কর দিয়েছি ৯০০ টাকা। এখন পৌরসভা থেকে নির্ধারিত কর ৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া পানির সুবিধার্থে বাসায় সাবমারসিবল পাম্প বসিয়েছি। সেটারও দেড় হাজার টাকা কর দিতে হবে। অথচ বাড়েনি কোন নাগরিক সুবিধা। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। পৌরসভার এ সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবী করেন তিনি।
২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকতারুন বলেন, বাসাবাড়ির জন্য আগে ৩৬০ টাকা কর দিতে হতো। যা গত বছর পর্যন্ত পরিশোধ করা আছে। হঠাৎ করে এ বছরের জন্য ৪২ হাজার ১ টাকা কর পরিশোধে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পেয়ে পৌরসভায় সত্যতা যাচাই করতে আসি। তারাও একই কথা জানালেন। এখন মাথার উপর যেন আসমান ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক এস.এম আজাদ হোসেন মুরাদ বলেন- আগে বকেয়া কর আদায় করাসহ পৌরবাসীর জীবন মানোন্নয়ন করা হয়। পৌরসেবার উন্নয়ন আমরা সবাই চাই। নাগরিক সেবা বঞ্চিত হওয়ার পরও উল্টো পৌরবাসীর ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। সেবার মান বৃদ্ধি না করে পৌরকর বৃদ্ধি অযৌক্তিক। পৌরবাসীকে করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব না। বর্ধিত কর প্রত্যাহার করে পূর্বের নিয়মে কর আদায় করা হোক। অন্যথায় আগামীতে বৃহত্তর কঠোর কর্মসূচী পালন করা হবে।
মানববন্ধনে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক এস.এম আজাদ হোসেন মুরাদ এর সভাপতিত্বে শিক্ষক জাহিদ রব্বানি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, সমাজসেবক বিন আলী পিন্টু, ৭ নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা আব্দুল বাশির, ৩ ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাশেদুজ্জামান, ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আকতারুনসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এসময় পৌরবাসীন্দাসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক টি.এম.এ. মমিন বলেন, অযৌক্তিক কর নির্ধারণ কথাটি ঠিক না। এটা অতিরিক্ত হতে পারে। আর এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। তবে আমাদের কর নির্ধারণ মূল্যায়ন কমিটি আছে, সেখানে আবেদন করলে তারা পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ