সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। টেকনোলজি সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞান হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কাজ করতে পারব। গোটা পৃথিবীতে এই স্ট্রাকচারের কোনো সেতু নির্মিত হয়নি। বাংলাদেশে যে নিজেরা পারে, এই ধারণাটাই বাংলাদেশের মর্যাদা সারা বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। হ্যাঁ বাংলাদেশ পারে। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না।’ তো কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারে নাই, পারবেও না ইনশাল্লাহ। এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের বৈঠকে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার প্রস্তাবটি আনেন চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টাব্যাপী চলা এ আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টির এমপিসহ ৩৮জন মন্ত্রী ও এমপি। পরে রাত ১১টা ৪০মিনিটে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দিলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
আলোচনায় অংশ নেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, পীর ফজলুর রহমান, বিএনপির হারুনুর রশিদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সততাটাই হচ্ছে আমার শক্তি আর বাংলাদেশের জনগণ। এই জনগণকে অপমান করে আমি কোনো কিছু করব না। আমি জানি, এই একটা সিদ্ধান্ত (নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার), যখনই সেতু নির্মাণ শুরু করে দিলাম তখনই সকলের টনক নড়ল। তখন বাংলাদেশকে সবাই সমীহ করতে শুরু করল।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা। আমাদের একটা খারাপ সময় গেছে। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি বলে উন্নয়ন করতে পেরেছি। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এসময় তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা শুধু সেতু নয়, ডাবল ডেকার সেতু। সেতুর নিচে দিয়ে রেলওয়ে, ওপর দিয়ে চলবে গাড়ি। একসাথে ব্রিজে ট্রেন ও গাড়ি পূর্ণ থাকলেও সেতু যেন ভার বইতে পারে সেভাবে পিলার এমনভাবে করা হয়েছে যেন ৫ হাজার টনের জাহাজ ধাক্কা দিলেও পিলারের কোনো ক্ষতি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে কেন দাম বেড়েছে এটা সেটা নানা কথা বলে। মেগা প্রজেক্ট কেন করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ প্রফেসর তাদের মুখ থেকে এসব কথা শুনলে কেমন লাগে? কি মানসিকতা তাদের। কত হীনমন্যতায় ভোগে তারা। জানি তারা কনসালটেন্সি পাবে না এই তো? আর তো কিছু না। অথবা ইউনূস যদি কিছুটা উচ্ছিষ্ট বিলায়।’
‘আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, এটা মনে রাখবেন’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ড. ইউনূস তার একটা এমডি পদের লোভে বিশ্ব ব্যাংককে দিয়ে, হিলারি ক্লিনটিনকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছিলেন। তারা ভেবেছিল আমরা এখানে সারেন্ডার করব। আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, এটা মনে রাখবেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি, করব না। এই দেশকে আমরা ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। দেশের মাথা কোনোরকম হেট হোক এটা কোনো দিন করব না।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ