২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ঋণ করে ঘি খাওয়া ও জনগণের কাঁধে কর চাপানোর বাজেট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তারা ওই আখ্যা দিয়ে বাজেট প্রত্যাখ্যান করেন। তারা প্রস্তাবিত বাজেট বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক ধারায় বাজেট প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারায় এ বাজেট প্রণীত হয়নি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংবিধানের নির্দেশনা মানা হয়নি। মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের ধারা আমাদের সংবিধান অনুমোদন দেয় না, অথচ ওই ধারায় বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ বাজেট আমলা ও লুটেরানির্ভর। এটা প্রণয়নে জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। বাজেটের ঘাটতি পূরণের জন্য সাধারণ মানুষ, মধ্যবিত্তের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হবে। এই বাজেট আয়বৈষম্য, সম্পদবৈষম্য, খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্যবৈষম্য, আঞ্চলিকবৈষম্য দূর করতে কোনো ভূমিকা নেবে না, বরং বৈষম্য বাড়াবে।’
‘বাজেটে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাদ্যপণ্য মজুত, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, ন্যূনতম মজুরির ও হতদরিদ্র-কর্মহীনদের নগদ সহায়তার নির্দেশনা নেই, যা বর্তমান সংকটকালীন সময়ে মানুষ বাঁচাতে ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে জরুরি।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘পাচার টাকা ফেরত আনা, কালো টাকা ও ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে কঠোর ভূমিকা না রেখে, বাজেটে তাদের সামান্য কর দেওয়ার মাধ্যমে ওই টাকা বৈধ করে দেওয়ার সুযোগ শুধু অনৈতিকই নয়, এই ধারা টাকা পাচারকারী ও লুটপাটকারীদের উৎসাহিত করবে।’
তারা বলেন, ‘বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প স্থগিত, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমানো, প্রতিরক্ষা খাতসহ সরকারি ক্রয় খাতে বরাদ্দ কমিয়ে আনা, সর্বত্র স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিদেশভ্রমণসহ অপ্রয়োজনীয় বিলাসী কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু এর কোনো আলামত আমরা দেখতে পেলাম না।’
‘সাধারণভাবে, বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য সম্পদশালীদের ওপর বিশেষ করারোপ, রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে বাজেটের উন্নয়ন-বিনিয়োগের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা প্রয়োজন ছিল। বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ খরচ করতে হবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা-গবেষণা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পরিবেশ, সামাজিক সুরক্ষাসহ সামাজিক কল্যাণ ও সামাজিক অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে কৃষি-শিল্প, স্বনিয়োজিত বিনিয়োগ, আত্মকর্মসংস্থান, বেকারত্ব দূরীকরণ খাতে এবং এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে। সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা জবাবদিহি ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দের অতীত অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করে সরাসরি ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা ও বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জনগণের ভোটাধিকার, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে, আমলানির্ভর এ বাজেটের ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রস্তাবিত বাজেট অব্যাহত থাকলে ধন বৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্য, সামাজিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক অস্থিরতা দূর হবে না।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘খাদ্য সংকট দূর করতে দেশের কৃষি উৎপাদন অব্যাহত ও বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন ব্যয় কমানো ও উৎপাদিত ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে হবে। মধ্যস্বত্ত্বভোগী, মজুতদারদের দমন করতে হবে। এজন্য উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তুলতে হবে। বাজেটে এর কোনো নির্দেশনা না দিয়ে কৃষি উৎপাদনে সহায়তার কথা গালভরা বুলি ছাড়া কিছু নয়।’
এতে তারা বলেন, ‘অপচয়-দুর্নীতি-ভুলনীতি দূর করতে পারলে অনেক খাতে তথাকথিত ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। যেমন জ্বালানি খাত। এ বিষয়ে ভুলনীতি-দুর্নীতি দূর করতে কঠোর নির্দেশনা না দিয়ে বরং দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বাজেটে উত্থাপিত তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। গত বাজেট বরাদ্দের স্বচ্ছ হিসাব না দিয়ে গত বারের বাজেট কাটছাঁট করে নতুন বাজেট উত্থাপন মানুষের কাছে মোটেই উৎসাহ সৃষ্টি করবে না।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আগে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি বাজেটের ওপর নির্ভর করতো। এখন আগে পরে দাম বাড়িয়ে মানুষের চোখকে ফাঁকি দেওয়া হয়। তাই বাজেটে যতই ভালো কথার ফুলঝুড়ি থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের জীবনমানে কোনো পরিবর্তন আনবে না।’
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ