ব্রিটেন সফররত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, শেখ কামাল ছিলেন নিরহংকারী। রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও তিনি অতি সাদাসিদা জীবন যাপন করেছেন। তরুণদের সাথে অকপটে মিশেছেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে শেখ কামাল নাটক, থিয়েটার, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
স্পিকার আরও বলেন, শেখ কামাল সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন, নিষ্ঠা ও উচ্চাকাঙ্খার নজির স্থাপন করে গেছেন আবাহনীর মতো আধুনিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। তিনিই প্রথম বিদেশি কোচ আনার ব্যবস্থা করে দেশীয় ক্রীড়াকে বিশ্বের আঙিনায় উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালান। শেখ কামালের কীর্তি-কর্ম অনুসরণ করে তরুণ সমাজকে ক্রীড়া-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শান্তি ও সহনশীলতার শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান স্পিকার।
গতকাল শুক্রবার শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়োজিত “রিমেম্বারিং শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল : রোল অফ ইউথ এন্ড স্পোর্টস ইন প্রোমোটিং পিস, টলারেন্স এন্ড নেশন বিল্ডিং” শীর্ষক আলোচনা এসব কথা বলেন তিনি।
সংসদের গণসংযোগ বিভাগ জনায়, লন্ডনস্থ মিলার রোডের ‘ইম্প্রেসান ইভেন্টস ভেন্যু’তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজ সাইদা মোনা তাসনিম। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এম্বাসেডর সৈয়দ শাহেদ রেজা, ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি মেম্বার সৈয়দ সাজিদুর রাহমান ফারুক, তরুণ ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অনুরাগী মিরাজ সাদাত, তরুণ ব্রিটিশ ইউক্রেনিয়ান ক্রীড়া অনুরাগী আলবার্ট এডওয়ার্ড সালিমোভ প্রমুখ।
এর আগে স্পিকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের উপর আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ মাধ্যমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আরো বলেন, আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্য বিয়োগান্তক শোকের মাস। এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মাত্র ২৬ বছর বয়সে বাংলাদেশের উদীয়মান বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালকেও সেই কালো রাতে হত্যা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের উদীয়মান বহুমাত্রিক প্রতিভা ও মেধার অধিকারী শেখ কামাল ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও নাট্যঙ্গনে ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকর্মী, খেলোয়াড় ও সংগঠক। তিনি স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো মিউজিক্যাল ব্যান্ড। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। তিনি ছিলেন তরুণ প্রজন্মের অহংকার। তার কাছে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে। এ সময় শহীদ শেখ কামালের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আজকের প্রজন্মকে জাতি গঠনে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান স্পিকার।
তিনি আরো বলেন, ২৫ মার্চ রাতেই শেখ কামাল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি জেনারেল ওসমানীর এইড-ডি-ক্যাম্প (এডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনায় ফিরে আসেন। তরুণদের নিয়ে নানান সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত হন। চির তারুণ্যের প্রতীক হয়ে শেখ কামাল প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেঁচে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি মেম্বার সুলতান মাহমুদ শরীফ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান, এমবিই স্টুডেন্ট একশন কমিটি অফ দি ওভারসিস ফ্রিডম মুভমেন্ট অফ বাংলাদেশ, ওয়ার অব লিবারেশন ইন দি ইউকে এবং ওভারসিস ফ্রিডম ফাইটার এর সদস্যবৃন্দ।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন