রাজধানীকে বাসযোগ্য শহর গড়তে হলে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে হবে। মানুষের এই স্রোত কমাতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সাথে মেট্রোরেল ও দ্রুতগামী রেল, সড়ক ও নৌপথ চালুর কথা বলা হয়েছে। এসব জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা তৈরির কথা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমবে বলে গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে হোটেল হলিডে ইনে নাগরিক টেলিভিশনের উদ্যোগে ‘বাসযোগ্য ঢাকা-কতদূর?’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নাগরিক টিভির হেড অফ নিউজ দীপ আজাদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই'র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সভাপতি নুরুল হুদা, ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও স্থপতি ইকবাল হাবিব।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, একটি শহরকে বাসযোগ্য করতে হলে আগে জনসংখ্যার পরিকল্পনা করতে হবে। ওই শহরে কি পরিমাণ জনসংখ্যা আছে, ভবিষ্যতে কি পরিমাণ জনসংখ্যা হবে? এটার সম্মুখ ধারণা থাকতে হবে। এই মানুষগুলোকে কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে সেটার পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমরা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করেছি। এই পরিকল্পনায় নাগরিকের সব সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষ এখন ঢাকামুখী। ঢাকা শহর আয়তনের তুলনায় জনঘনত্ব অনেক বেশি। ঢাকামুখী মানুষের স্রোত কমাতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাহলে মানুষের ঢাকামুখী স্রোত কমবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ড্যাপে অনেকগুলো সুবিধার কথা বলা হয়েছে। অথচ দুই-একটা বিষয় নিয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। শতভাগের মধ্যে দুই ভাগ সমস্যা থাকতেই পারে। আর বাকি ৯৮ ভাগতো ভাল। এটা নিয়ে আলোচনা করেন। আমরা ড্যাপ গেজেট হওয়ার আগেও বলেছি, যুক্তিসঙ্গত কোন সমস্যা থাকলে অবশ্যই সমাধান করা হবে। এখনও বলছি, তিন মাস বা ছয় মাস অন্তর অন্তর মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সমস্যাগুলো সংশোধন করা হবে।
এফবিসিসিআই'র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ যেভাবে তাদের শহরকে নিয়ে আগামীর কথা ভেবে পরিকল্পনা করছে। আমাদেরও তেমন আগামীর প্রজন্মের কথা ভেবে বিজ্ঞানস্মমত উপায়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে। যেদেশগুলো তাদের শহরের উন্নয়নে ফলপ্রসূ পরিকল্পনা করেছে প্রয়োজনে নলেজ শেয়ার করে নিতে হবে তাদের কাছ থেকে।
রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, সুন্দর শহর গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে রাজউক। নগর পরিকল্পানা বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন ঢাকায় আসা মানুষের স্রোত কমিয়ে আনা। ঢাকা ছাড়া অন্যান্য স্থানে শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নতি ঘটাতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। তখন নগর পরিকল্পনাকে আরও ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন. রাজউক ভবনের প্ল্যান দেয়, সে ভবন নির্মাণ করে ইঞ্জিনিয়াররা। রাজউকের প্ল্যানবিহীন যেসব ভবন হয়েছে, সেটার জন্য রাজউক যতটুকু দায়ি ততটুকু ইঞ্জিনিয়ারাও।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, যেকোন সিটিকে পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে হলে মেট্রোরেল খুবই গুরুত্ববহন করে। উচ্চগতির ট্রেনকে গুরুত্ব দিলে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ কাজে এসে নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে। যখণ এক ঘণ্টায় একটা জেলা থেকে রাজধানীতে এসে অফিস করে চলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে তখন রাজধানী কেন্দ্রীক পরিকল্পনা, ড্যাপ সব কিছুর সুন্দর বাস্তবায়ন হবে। উচ্চ গতির ট্রেন জাতীয় এমন উদ্যোগ আমাদের জন্য খুবই জরুরি। রাজধানীর পরিকল্পনায় এবং তা বাস্তবায়নে রাজউকের অনেক বড় ভূমিকা আছে। তাদের কাজগুলো তাদের সঠিকভাবে করতে হবে, তবে তা শুধু ল্যান্ড কেন্দ্রীক উন্নয়ন নিয়ে নয় সার্বিক দিকেই হতে হবে।
ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপের নতুন শহরের পরিকল্পনা যেমন রয়েছে, তেমনি পুরাতন শহরকেও যেন সুন্দরভাবে ঢেলে সাজানো যায় তার সঠিক পরিকল্পনায় নেওয়া হয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে সার্বিক দিক থেকে সবাই উপকৃত হবে। ড্যাপে ট্রানজিট ওরিয়েন্ট ডেভলপমেন্ট সম্পর্কিত পরিকল্পনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতর উন্নয়ন ঘটবে। ফ্লোর এরিয়ার রেশিও যে কথা বলা হচ্ছে সেখানে প্রশস্ত রাস্তা বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ফজলে রেজা সুমন বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীকে সুন্দরভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়া সম্ভব হবে। এখানে নানা মহলে ফ্লোর এরিয়া রেশিও নিয়ে বিভ্রান্তি চলছে কিন্তু কেন করা হয়েছে তা বুঝতে হবে আমাদের। এখানে শুধু স্থপতির বিষয় ছাড়াও সার্বিক বিষয়াদি নিয়েই একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন