বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় করাটায় মূলত আমাদের প্রথম দফা। যেভাবে দেশ চলছে সেভাবে চলতে পারে না। চাপাবাজি করে জনগণকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাই। এজন্য ২৭ দফা প্রণয়ন করা হয়েছে। শহীদ জিয়াউর রহমান যে লক্ষ্যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন সেগুলো বর্তমান সরকার ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, কোনো স্বৈরাচার সরকার আপোসে ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। তাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর বিকল্প নেই। অতীতে যেমন ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়েছে। তেমনই এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র যে কোন মুহূর্তে এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমান দুটি ক্রান্তিকালে জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। একটি ২৫ মার্চের পর আরেকটি ৭ নভেম্বর। আজকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আওয়ামী লীগে কোনো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নেই। আমাদের দলে এখনো শাহজাহান ওমরের মতো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। এগুলোতো জীবন্ত ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমান নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ শুরু করেন। গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি খাদ্য উৎপাদন করে বিদেশে চাল রপ্তানি করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি শাসন করেছেন। এমন কোনো খাত নেই যেখানে জিয়াউর রহমানের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রণয়ন করেন। তার ঘোষিত ১৯ দফা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০‘ এর আলোকে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির ৬০০ এর বেশি লোক গুম। এক হাজারের বেশি মানুষ খুন। খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। ১১ লাখ কোটি টাকা লুটে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বেড়েছে। তারা দেশে বিচারব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দলীয়করণের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এমতাবস্থায় জনগণ আওয়াজ তুলেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো সংকটের সমাধান হবে না। যারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা এর পুনর্গঠন করতে পারবে না। তাদেরকে বিদায় না দিলে দেশকে মেরামত করা যাবেনা।
অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, আজকে আবারও দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করার প্রচেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এর বিকল্প নেই।
ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, জিয়াউর রহমান নানা গুণে গুণান্বিত। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অসংখ্য কাজ করেছেন। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম জাদুঘরে তার ছবি এখনো টাঙানো আছে। জাতি তাকে আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
সাংবাদিক নেতা কাদের গণি চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন চারণ রাজনীতিবিদ। যিনি গ্রামে গঞ্জে হেঁটে হেঁটে জনগণের কাছে গেছেন। তাদের সাথে মিশেছেন। দেশ ও জনগণের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার সব পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তার হাত ধরেই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঘোষণা করে নতুনভাবে পরিচিত করেছেন আমাদেরকে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল ও ডা. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের সহসভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত