৩০ মে, ২০২৩ ১৩:৩৫

মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা: হানিফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা: হানিফ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কখনও মৃত্যু ভয়ে আপস করেননি। স্বাধীনতার জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, কখনও ভীত হননি। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যাও মৃত্যুকে তুচ্ছ করে, আলিঙ্গন করে ১৭ মে দেশে ফিরে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ১৯ বারের বেশি হত্যাচেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন কিন্তু ভীত হননি। শত বাধা, মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার পক্ষে আছে ততদিন কোনও অপশক্তি তার কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

গত ১৭ মে বিকাল সাড়ে তিনটায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, একাত্তরে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের তাবেদার রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করেছে তারাই এখন নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু শত শত মানুষ আহত হয়েছিল, আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। যারা গ্রেনেড হামলা চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান? যারা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের পুরস্কৃত করে বিচারের পথ বন্ধ করেছে, গণতন্ত্র হত্যা করেছে তাদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান?

তিনি বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য দেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করা, আইনের শাসন ধ্বংস করা।

হানিফ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দিয়ে তারা বিচারের রায় কার্যকরের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। আজ তারা কোন মুখে মানবাধিকারের কথা বলে?

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৭ মে জাতির জন্য ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলেও তার পূর্ণতা ছিল না। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দেশে আসলেন সেদিন বিজয় পূর্ণতা পেয়েছিল।

তিনি বলেন, এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খুনি জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছিল। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে জেলে রাখা হয়েছিল। দেশ দুর্বিষহ, দুঃসময় পার করছিল। এরকম এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা শত বাধা, ভয় উপেক্ষা করে বাঙালির মুক্তির জন্য মৃত্যুর মুখে দেশে ফিরে এসেছিলেন।

হানিফ বলেন, আজ ৪২ বছর পর এদেশের পানি অনেক গড়িয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পদদলিত করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা রাজাকার-আলবদরদের বিচার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় নিয়ে এসেছেন। যে বাংলাদেশে ছিল চরম দারিদ্র। আজ চরম দারিদ্রসীমা ৫ শতাংশের কাছে নেমে এসেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আজ প্রমাণিত হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে সেই বাংলাদেশ আজ আলোয় উদ্ভাসিত।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী।

এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর সদস্য জেবুন্নছা হক, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন উপ-দফতর সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর