ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ই-কমার্স সাইট রবিশপের নাম ও লোগো ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগে মূল হোতা আল ইমরান জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
বুধবার রাতে নোয়াখালীতে এক অভিযানে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ।
এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নকল রবিশপ ওয়েবসাইটের ব্যাক আপ কপি সংবলিত একটি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।
সিটিটিসি জানায়, ই-কমার্স সাইট রবিশপের ওয়েবসাইট robishop.com.bd এর অনুকরণে robishoper.com নামক ভুয়া ওয়েবসাইট ও Robi Bangladesh নামে ফেসবুক পেইজ বানিয়ে আল ইমরান জুয়েল দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের নামে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন। এ বিষয়ে দেশের অন্যতম বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ১০ জুলাই গুলশান থানায় একটি মামলা করে। মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করে মূলহোতা জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়।
তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারক চক্রটি জাপানভিত্তিক ডোমেইন ও ওয়েব হোস্টিং প্রতিষ্ঠান web.z.com থেকে ডোমেইন এবং বাংলাদেশভিত্তিক ওয়েব হোস্টিং প্রতিষ্ঠান allothost.com থেকে হোস্টিং কিনে robishop.com.bd এর অনুকরণে robishoper.com নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে বিভিন্ন পণ্যে ৫০-৭০% পর্যন্ত আকর্ষণীয় ছাড়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতো। বিজ্ঞাপন তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে ক্লোন করা ছবি।
ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে তিনি Robi Bangladesh নামে একটি ফেসবুক পেজও তৈরি করেছিলেন। সাধারণ মানুষ এই ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজকে প্রকৃত রবিশপের মনে করে কেনাকাটা করার জন্য robishoper.com ওয়েবসাইটে দেওয়া বিকাশ, নগদ ও রকেট নাম্বারে টাকা পরিশোধ করতো।
ভুয়া ওয়েবসাইটটি কারিগরি দিক বিবেচনায় এতটাই দক্ষতার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল যে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রতারিত হতেন। নিজেদের আড়াল করার জন্য প্রতারক চক্রটি সাধারণ গ্রাহকদের হেল্পলাইন নাম্বার হিসেবে অনলাইন টেলিফোন সার্ভিস ব্রিলিয়ান্টের একটি নাম্বার সরবরাহ করতো। এছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য তারা robishoper.com ওয়েবসাইটে দাপ্তরিক একটি ঠিকানাও দিয়েছিল।
এই গ্রুপটি অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে নকল ওয়েবসাইটে একেক সময় একেক নাম্বার দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতো। এভাবে খুব অল্প সময়েই চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গ্রেফতার জুয়েল একজন দক্ষ ওয়েব ডেভেলপার এবং তিনি এই চক্রের মূল হোতা ও ওয়েবসাইটটির ডিজাইনার।
সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন জানান, ইতোপূর্বেও এই প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে মিল রেখে ভুয়া ওয়েবসাইট যেমন- daraz.cl, realme.city বানিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। গ্রেফতার জুয়েলকে গুলশান থানায় করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ