শিরোনাম
১৫ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:১৮

জাতীয় শোক দিবসে বিজিবির নানা কর্মসূচি পালন

দেশব্যাপী দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় শোক দিবসে বিজিবির নানা কর্মসূচি পালন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদৎেবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশব্যাপী দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। 

দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী, বিজিবি সদর দপ্তরসহ সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটসমূহের মসজিদে যোহর নামাজের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শাহাদাৎবরণকারী পরিবারবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এর পূর্বে বিজিবির সকল মসজিদে বাদ ফজর হতে কোরআন খতম করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রিভিলি হতে রিট্রিট পর্যন্ত বিজিবির সকল স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং বিজিবির সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করে। 

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরসহ বিজিবি’র সকল রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিট পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু’ এবং ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলস এর ৩য় রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু’র দেয়া ভাষণের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পিলখানায় আয়োজিত আলোচনা সভায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, বিএএম, এনডিসি, পিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

আলোচনা সভায় বিজিবি মহাপরিচালক তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট শাহাদাৎবরণকারী বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ বর্ণাঢ্যময় জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি আজীবন দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করেছেন, বার বার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন কিন্তু কখনোই কারো কাছে মাথা নত করেননি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় থেকে শুরু করে ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯'র গণঅভ্যুত্থান, ৭০'র নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সব সময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। 

বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ই মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বাংলার আপামর জনসাধারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় নরঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। তাই আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত বেদনা-বিধুর ও কলঙ্কময় দিন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলসের তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসকে চোরাচালান দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে জাতির পিতা বলেছিলেন, "ঈমানের সঙ্গে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাসো।" জাতির পিতার এই কালোত্তীর্ণ দিক-নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে বিজিবি মহাপরিচালক দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদক চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধ, দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দুর্যোগ মোকাবিলাসহ দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি বিজিবি সদস্যকে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। 

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উপনীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মাণ ও জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রতিটি বিজিবি সদস্য দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিজিবি মহাপরিচালক।

দিবসটি উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সীমান্তবর্তী ৮,৭৬০টি দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে শুকনা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এবং মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১৬,৭৯৭ জন রোগীকে বিনামূল্যে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সীমান্ত পরিবার কল্যাণ সমিতি’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সীমান্ত কলকাকলি চিলড্রেন ক্লাব এবং অফিসার্স চিলড্রেন ক্লাবের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশেষ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সীমান্ত পরিবার কল্যাণ সমিতি (সীপকস) এবং সীমান্ত অফিসার্স চিলড্রেন ক্লাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মিসেস মনোয়ারা নাজমুল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন। এছাড়াও বিজিবি পরিচালিত সকল স্কুল ও কলেজে জাতীয় কার্যক্রম অনুযায়ী যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হয়।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর