ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রবিবার হরতালের নামে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ও সাধারণের যানচলাচলে ব্যাহত করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেবে।
শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজ পল্টন ও এর আশপাশ এলাকায় বিএনপিসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল। অনুমতি গ্রহণের সময় বিএনপি নেতৃবৃন্দ নিজেরাই উল্লেখ্য করে যে বিজয়নগর থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত তারা এক থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার লোকের জমায়েত করবেন। তাদের সমাবেশে কেউ যেন বাধাগ্রস্ত না করে এবং নাশককতামূলক কর্মকাণ্ড না চালাতে পারে সেজন্য পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু সকাল ১০ টার নাগাদ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী কাকরাইল মোড় ও এর আশপাশে অবস্থান গ্রহণ করে। তারা এ সময় বিনা-কারণে বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর করে। এর কিছুক্ষণ পর তারা প্রধান বিচারপতির বাস ভবনে অতর্কিত হামলা করে এবং গেইট ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে লাঠিসোঁটা হাতে বাস ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানেও ভাঙচুর চালায়। অতঃপর পুলিশি বাধার মুখে তারা বাস ভবন থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বাস ভবন জাজেস কমপ্লেক্স আক্রমণ চালায় এবং রিসেপশন কক্ষে অগ্নি সংযোগের চেষ্টা করে। এছাড়ার জাজেস কমপ্লেক্সের সিসিটিভি ক্যামেরাসহ আশপাশের পুলিশের শত শত সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। দুষ্কৃতকারীরা কাকরাইল মোড় থেকে নাইটেঙ্গেল মোড়ে পর্যন্ত বেশ কিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আইডিবি ভবনের ভিতরে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা নাইটেঙ্গেল মোড়ে বাসে অগ্নিসংযোগ করে। লিটলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে তারা দুইজন পুলিশ সদস্যকে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে প্রহার করে। এই দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে তারা ক্ষ্যান্ত হয়। একই সাথে তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ চালায় এবং ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ করার পর একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ ২৬টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। তারা রমনা ট্রাফিক ডিসির অফিসে ভাঙচুর করে এবং অনেকগুলো দোকানে ভাঙচুর করে। অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে এবং পুলিশকে সেখানে আক্রমণ করে। তারা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ লাইনের ভেতরে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভাঙচুর চালায়। ধ্বংসযজ্ঞের একপর্যায়ে তারা বক্সকালভার্ট রোডে একজন পুলিশকে পিটিয়ে চাপাতি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করেও ন্যাক্কারজনকভাবে ঐ পুলিশ সদস্যকে লাথি মারতে থাকে। এছাড়া তারা পল্টন থানায়ও আক্রমণ করার চেষ্টা কিরে।
তারা ট্রাফিক বক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তিন ঘণ্টা ধরে চলা তাদের ধ্বংসযজ্ঞে পুলিশ ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন এবং আক্রমণকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক। শর্ত সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য আইন অমান্যকারীদের প্রতি ধিক্কার জানায়। যারা এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে যথাযথভাবে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাব।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ছিল বিএনপির। এই মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত দুজন নিহত হন।
বিএনপি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে কাল সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি পালন করবে দলটি। বিএনপির হরতালে সমর্থন জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ।
জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে কাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল