দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেছেন, যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করে তাদের জবাবদিহি করা গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল ২১ আগস্ট বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক একথা বলেন। স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, বিশ্বের যেকোনো দেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মঙ্গল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা দেশগুলোর জন্য তা আরো গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকদের তাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া এবং যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা করে তাদের জবাবদিহি করা জরুরি।
ঢাকায় আসা জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করার আহ্বান জানিয়ে ডুজারিক বলেন, ‘আমাদের মানবাধিকার সহকর্মীদের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে বলব। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, সহিংসতার সব অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে।’
স্বাচ্ছন্দ্যে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার সংবাদে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ৭টি গণমাধ্যমের অফিসে দুর্বৃত্তদের হামলা এবং ব্যাপক ভাংচুরের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ২০ আগস্ট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা আমরা স্বীকার করছি যে, বাংলাদেশের সাংবাদিকরা রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে তথা পেশাগত দায়িত্ব পালনে অস্বাভাবিক রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা তাদের নিরাপত্তা ও রিপোর্টিংয়ের স্বাধীনতায় এমন অন্তরায়ের জন্যে আমাদের উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করছি। চরম অস্থিরতা ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার মধ্যেও সাংবাদিকরা সঠিক সংবাদ জনসাধারণকে জানানোর জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করছেন তাও অকপটে স্মরণ করছি। তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
এর আগে, গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা স্লোগান দিতে দিতে জোর করে প্রধান ফটক খুলে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। দুষ্কৃতকারীরা প্রথমে রেডিও ক্যাপিটালের ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
এরপর বাইরে এসে দুষ্কৃতকারীরা মিডিয়া প্রাঙ্গণে রাখা অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের ধাওয়া করে দুষ্কৃতকারীরা। কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে শান্ত স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ সন্ত্রাসী হামলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। দুষ্কৃতকারীদের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে অনেকে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
এরপর দুষ্কৃতকারীরা দৈনিক কালের কণ্ঠর অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। তারা কাচের দেয়াল ও দরজা ভাঙচুর করে। তারা অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা অফিসকর্মীদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায়। এ সময় অফিসে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হামলাকারীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রাণ রক্ষায় তাঁরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেন। এভাবে দুষ্কৃতকারীরা প্রায় আধঘণ্টা ধরে নারকীয় তাণ্ডব চালায়।
এতে পাশাপাশি তিনটি ভবনে কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেল, টি স্পোর্টস ও ক্যাপিটাল এফএম রেডিওর অফিস রয়েছে।
সিপিজের নিন্দা
সারাাবিশ্বের কর্মজীবী সাংবাদিকদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরত নিউইয়র্কভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে)’র এশিয়া প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর বেহ লিহ ঈ বলেছেন, সোমবার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ঢাকা অফিসে ন্যাক্কারজনক হামলা-সহ বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর যে কোন ধরনের হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ইস্যুটিকে প্রাধান্য দিয়ে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই দুর্বৃত্তদের বিচারে সোপর্দ করবেন। রাজনৈতিকভাবে তারা যে মতাদর্শেরই হউক না কেন পেশাগত কারণে কোন সাংবাদিক অথবা পত্রিকা অফিস আক্রান্ত অথবা হামলার শিকার হওয়া উচিত নয়।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক