এ বছর জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের সম্মাননা স্মারক জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করবে সরকার।
মঙ্গলবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পুরস্কার পাওয়া ব্যক্তিদের স্বজন ও তাদের প্রতিনিধিদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পদক গ্রহণ না করা বদরুদ্দীন উমরের সম্মাননা স্মারক জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এ বছর সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশের পরপরই বদরুদ্দীন উমর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন তিনি তার পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।
পুরস্কার গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে বদরুদ্দীন উমর এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে আমাকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমি সেগুলোর কোনওটিই গ্রহণ করিনি। এখন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য ঘোষণা করেছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু তাদের দেওয়া এই পুরস্কারও গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এই প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে আমি এটা জানিয়ে দিচ্ছি।
এবার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাতজনের মধ্যে ছয়জনই মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন। কেবল শিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে বদরুদ্দীন উমর জীবদ্দশায় এ পুরস্কার পান।
প্রধান উপদেষ্টা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরেন। এই বছর ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে ‘বাংলার সূর্যসন্তান’ বলে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা।
লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করতে পেরে গর্বিত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার সম্মাননা স্মারক আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে জেন-জি প্রজন্ম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের অনুপ্রেরণার নাম বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ন্যায়বিচারের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য জোরালো প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন তিনি। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের অবদান তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি সব সময় প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
কবি আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার কবিতা বহু কবি, লেখক, পাঠককে অনুপ্রাণিত করেছে।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি ব্র্যাক গড়েছিলেন। প্রান্তিক গরীব মানুষের জীবনমান উন্নয়নসহ বহুমুখী কাজে ব্র্যাক এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলা সংগীত ও ভাস্কর্য জগতে আজম খান ও নভেরা আহমেদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পূর্ববাংলায় নভেরার হাতেই প্রথম ভাস্কর্যের উদ্বোধন হয়। তিনি আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ।
আজম খান মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজের বঞ্চিত মানুষের জন্য গানে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)।
এছাড়া সরকার জানিয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জেড-ফোর্সের কমান্ডার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ২০০৩ সালে দেওয়া স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) বহাল রাখা হচ্ছে।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালে বীর উত্তম জিয়াউর রহমানকে দেওয়া এ পুরস্কার বাতিল করেছিল।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
বিডি প্রতিদিন/একেএ
