মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

টিকা নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণোদিত : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড মহামারির সময়ে স্বাস্থ্য খাতের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবির) প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গত ১২ এপ্রিল টিআইবি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। জাহিদ মালিক বলেন, ‘মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খুবই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল খুবই ‘ইনট্রান্সপারেন্ট’ কাজ করেছে। টিআইবি দেশের ভাবমূর্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। এ কারণে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য তুলে ধরে।’

টিআইবির জরিপের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি দেশের ভাবমূর্তি যেন উজ্জ্বল হয়, দেশের অবস্থান ভালো হয়। এটা আমাদের মনে সব সময় থাকে। কিন্তু অনেক সংস্থা, তার মধ্যে টিআইবিও হয়তো, সেদিকটা তারা গুরুত্ব দেয় না।’

দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানে সরকারি ব্যয়ের চিত্রে ‘স্বচ্ছতা না থাকার’ কথা বলা হয়েছিল টিআইবির প্রতিবেদনে। এর জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা কেন্দ্রের সংখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সারা দেশে স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ৭৫৯টি, অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ১ লাখ ৪০ হাজার। স্থায়ী বুথ সাড়ে ৩ হাজার, ক্যাম্পেইনের সময় দেড় লাখ হয়।

কিন্তু টিআইবি তাদের জরিপের আওতায় ১০৫টি কেন্দ্রের তথ্য নিয়েছে। সারা দেশে ১২ কোটি ৮৪ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হলেও টিআইবি কথা বলেছে ১ হাজার ৮০০ জন লোকের সঙ্গে।’

জরিপে টেলিফোনের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টেলিফোনের মাধ্যমে কীভাবে রোগী এবং রোগীর পরিচয় শনাক্ত হলো তা ‘নিশ্চিত নয়’। এত ছোট পরিসরের জরিপে ‘অবশ্যই সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি’। টিকা নিতে ঘুষ দেওয়ার যে অভিযোগ টিআইবি এনেছে, তাও সঠিক নয় বলে দাবি করেন জাহিদ মালেক। ‘বলা হয়েছে টিকা নিতে গড়ে ৬৭ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এখন তো ৬৭ টাকা ফকিরও নেয় না।’ টিআইবির অভিযোগ ‘সঠিক নয়’ দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা’ বজায় রেখেছে। ভারত থেকে সরকার যে দামে টিকা কিনেছে, তার কাছাকাছি দামে চীন থেকে টিকা কেনা হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে কস্ট শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ১০ কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছে। আর কোভেক্স থেকে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা বিনামূল্যে পেয়েছি।’ টিকার দাম নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

গত মার্চে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, টিকা কিনতে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তার ব্যাখ্যা দেন তিনি। ‘আমি বলেছিলাম ৪০ হাজার কোটি টাকার কথা। এর মানে এই নয় বাংলাদেশ সরকারের ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টিকা আনা, প্লেনের ভাড়া, রাখা, সিরিঞ্জের দাম, টিকাদান কর্মসূচি চালানো- সব মিলিয়ে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ‘বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা হলো- যে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা আমরা ফ্রি পেয়েছি সেটার দাম আমরা ধরে হিসাব করেছি। উপহার হিসেবে পাওয়া টিকার বেশির ভাগই ফাইজার, মডার্নার। ওটারও তো একটা মূল্য আছে। সেটা যদি ধরি ২৫ হাজার কোটি টাকা ওই টিকার দামই আসে। দুটো মিলিয়ে আমরা বলেছি, বাংলাদেশের মানুষকে ৪০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের টিকা দিয়েছি।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিঞা, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল হোসেন বাদল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম খুরশীদ আলমসহ কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর