রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধর্ষণ গোপন রাখতেই বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী লতা সরকারকে (২৬) ধর্ষণের পর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িত সুজন মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই লতাকে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। গতকাল সকালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, লতা সরকারের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও একজন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এক্সপার্টের সহায়তায় তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরে তদন্ত দল ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশেষণ করেছে। লতার ডায়িং ডিক্লারেশন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত দল চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় জড়িত অজ্ঞাত আসামিকে শনাক্ত করে।  সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুক্রবার ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীরের নেতৃত্বে একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার তেগাছিয়া বাজার থেকে সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেফতার করে। সুজন মিয়ার বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের কোদালপুরে।

আসাদুজ্জামান জানান, লতার সঙ্গে সুজনের ৮ থেকে ১০ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে সুজন। ঘটনার দিন বিকালে সুজন বালির গদির খাটে লতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। লতা এরপর সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। তিনি সুজনকে বলেন- সে যদি লতাকে নিয়ে পালিয়ে না যায়, তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে জামাকাপড় নিয়ে রাতে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করতে বলেন। লতা সেখানে গেলে সুজন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে লতাকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া সাবান কারখানার কাছে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায় সুজন। সেখানে নিয়ে লতাকে ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে রাস্তার পাশে খাদে ফেলে দেয়। তখন লতা চিৎকার করতে থাকলে সুজন লতার গলা চেপে ধরে এবং সিমেন্টের পাথরের সঙ্গে মাথায় ৩ থেকে ৪টা আঘাত করে। এতে লতা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সুজন মনে করে লতা মারা গেছে। তারপর লতার ব্যাগের জামাকাপড় তার শরীরের ওপর রেখে আগুন ধরিয়ে সুজন পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা লতাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। রাতেই সুজন শরীয়তপুর গোসাইরহাটের কোদালপুরে তার গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখান থেকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকে।

গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশ খবর পায় কেরানীগঞ্জের সাবান কারখানার পাশে এক নারীর শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় লতার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর