ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে চাচারা বিভিন্ন কারণে মারধর করতেন। অবহেলা করতেন। সামান্য নিরাপত্তাকর্মীও কারণে-অকারণে চড়-থাপ্পড় মারত। এতে এক প্রকার ক্ষোভ জন্মায় যুবক পুলকের মনে। তাই মানুষ হত্যা করে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ ও এরশাদ শিকদারের মতো শীর্ষ সন্ত্রাসী হওয়ার স্বপ্ন জাগে তার। আর এ টার্গেট থেকে প্রথমে নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে খুন করেন। তবে প্রথম খুনের পরপরই তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডন হওয়ার ভয়ংকর স্বপ্নের কথা জানান পুলক।
ডিবি জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে অবহেলার শিকার পুলক সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করেন। যার অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ দক্ষিণখানের তোফাজ্জল চেয়ারম্যানের বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়াকে খুন করেন। আফিল বিভিন্ন সময় পুলককে চর-থাপ্পড় দিতেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী খোরশেদা খাতুন বাদী হয়ে মামলা করেন। সে মামলার তদন্তে নেমে হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলককে গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ। গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাবা হারিয়ে চাচাদের হাতে নির্যাতন ও নিরাপত্তাকর্মীর হাতে চড়-থাপ্পড় খেতেন। ফলে তার মধ্যে একটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তার ভিতরে একটি বিকৃত ইচ্ছার জন্ম হয়। দক্ষিণখানসহ উত্তরায় ত্রাস সৃষ্টি করতে সিরিয়াল কিলিংয়ের পরিকল্পনা করেন। তার টার্গেট ছিল নয়জনকে হত্যা করা। যার প্রথমটি হলো নিরাপত্তাকর্মী আফিল মিয়া। তিনি যদি হত্যা করতে পারেন, তাহলে সন্ত্রাসী হিসেবে মানুষ চিনবে। বডিগার্ড থাকবে। তার কথায় মানুষ উঠবে বসবে। অর্থাৎ রসু খাঁ, এরশাদ শিকদারের মতো বড় সন্ত্রাসী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। এ কথা তার মাকেও বলেছেন পুলক। ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার আগে ইয়াবা সেবন করেন পুলক। এরপর এসে তাকে হত্যা করেন। আর ইয়াবার বিষয়ে পুলক বলেছেন, ‘ইয়াবা সেবন করলে যে পিনিক হয়, মানুষ হত্যা করে তার চেয়ে বেশি পিনিক পেয়েছি।’ আসলে তার ডন হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করায় তার এ স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে হত্যার বিষয়ে নিজের দায় স্বীকার করেছেন। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলক এসএসসি পাস। বাবা মারা যাওয়ায় দক্ষিণখানে তার মামার বাসায় থাকতেন।
