মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর তার ফাঁসি কার্যকর নিয়ে আলোচনা জোরেশোরে চলছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শতাধিক নারীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হলেও কার্যকর হয়নি একটিও। এমনকি গাজীপুরের কাশিমপুরে থাকা একমাত্র নারী কারাগারে নেই ফাঁসির মঞ্চ। ১৭ নভেম্বর জুলাই গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তবে রায়ের বেলায় নারীকে সাধারণ আইনেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো আলাদা সুবিধাদি নেই। অতএব রায়ের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তার অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই বিবেচনায় তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।
কারা সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে শতাধিক নারীর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কারও ফাঁসি কার্যকর হয়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ মারা গেছেন, কারও আপিলে শাস্তি কমেছে। সূত্র আরও জানায়, সারা দেশের কারাগারে বর্তমানে বন্দি ফাঁসির আসামি রয়েছেন ৯৪ জন। এর মধ্যে কাশিমপুর কারাগারেই ৩৪ জন আছেন। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনায় স্বামী রিফাত শরিফ হত্যা মামলায় আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ফাঁসির দণ্ডাদেশ হলেও সেটি অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামরুন্নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপি, ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী হত্যায় গৃহকর্মী রীতা আক্তার ও রুমা ওরফে রেশমা, মা-বাবাকে হত্যার দায়ে ঐশী রহমানের রায় কার্যকর হয়নি। তাদের অনেকের মামলা নিয়ে হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আবার অনেকে ডেথ রেফারেন্স নিয়ে আপিল করেছেন। সেগুলো আপিল বিভাগে বিচারাধীন। দণ্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে দণ্ডিত।
তবে আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের কারণে তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়নি বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাঁসির ক্ষেত্রে নারীদের আইনত কোনো বাধা নেই। তাদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার মূল কারণ হলো উচ্চ আদালতের শাস্তি হ্রাসের প্রবণতা, আইনি বিধানে বিশেষ বিবেচনা, ফাঁসির মঞ্চের অভাব এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এ বিষয়গুলো নারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।