কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বিক্ষোভ করায় বিভিন্ন মেয়াদে ৫৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘অসহায় বাবার ডাক’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। এতে দণ্ডপ্রাপ্তদের বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নোয়াখালী থেকে আগত আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাতিজা জহিরুল ইসলাম নাহিদসহ আরও ৫৬ বাংলাদেশির বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। আমাদের দেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তারা আরব আমিরাতে আন্দোলন করে। তারা সে দেশের আইন সম্পর্কে অবগত ছিল না। এর ফলে বিভিন্ন মেয়াদে তাদের শাস্তি হয়েছে। বর্তমানে তাদের খোঁজখবর পাচ্ছি না। কী অবস্থায় রয়েছে, কোন জেলে রয়েছে- কিছুই জানতে পারছি না। আমরা আজ এসেছি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। যেন অতিদ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নাসিরুদ্দিন নামে এক বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানা থেকে এসেছি। আমার ছেলের নাম জহিরুল ইসলাম। সে আরব আমিরাতে আন্দোলনের সমন্বয়ক। গত ২০ তারিখ গ্রেপ্তারের পর থেকে ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমাদের এখন একটাই চাওয়া আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যেন কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আমাদের ছেলেদের মুক্ত করে আনেন। জানা গেছে, ইতোমধ্যে আরব আমিরাতে দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশির মুক্তির জন্য আইনজীবী ওলোরা আফরিনকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মিশন চিফ মুহাম্মদ মিযানুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিস থেকে এ তথ্য জানা যায়। আইনজীবী ওলোরা আফরিনকে সাহায্য করবে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) অ্যাম্বাসি। এর আগে ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পক্ষ থেকে (ফ্লাড) জানানো হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশি শ্রমিককে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন তারা।
ফ্লাডের আইন ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম জানান, এই শ্রমিকদের জন্য আইনি সহায়তা প্রদানের সময় আমরা জানতে পারি যে, এসব শ্রমিকের কেউই ওই দেশের আইন সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। দেশপ্রেমিক এসব শ্রমিককে মুক্ত করার জন্য ফ্লাডের পক্ষ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত অ্যাডভোকেট জাকিয়া আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ফ্লাডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ল’ ফার্মের সঙ্গেও তার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফ্লাডের পক্ষ থেকে সলিডারিটি সেন্টার, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জেনেভায় হিউম্যান রাইটস কমিশনের কাছে সহায়তার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ফাওজিয়া করিম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট ও ফ্লাডকে সব আইনি সহযোগিতা প্রদান করার নিশ্চয়তা দিয়েছে।