ময়মনসিংহ গীতিকা মহুয়ার সফল পরিবেশনার পর এবার আবারো এবার 'চন্দ্রাবতী' নিয়ে হাজির হচ্ছে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের সাংস্কৃতিক সংগঠন একতারা। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪ টায় মাস এডিসন হাইস্কুল, ৫৮০১ ফ্রানকোনিয়া রোড, আলেকজান্দ্রিয়া, ভার্জিনিয়া ২২৩১০ এ অনুষ্ঠিত হবে চন্দ্রবতীর পরিবেশনা।
চন্দ্রাবতী প্রখ্যাত দ্বিজবংশী দাসের কন্যা। চন্দ্রাবতীর মায়ের নাম সুলোচনা। তার নিবাস ‘চাইর কোনা পুস্কুনির পারে’ ‘চম্পানাগেশ্বর’ শোভিত অঞ্চলে অর্থাৎ কিশোরগঞ্জ জেলার পাতুয়ারী গ্রামে। চন্দ্রাবতীর বাল্যজীবনে প্রেম আসে। বংশীদাসের কন্যা চন্দ্রাবতী একদিন পূজার জন্য ফুল তুলতে গেলে সুন্ধ্যা গ্রামের জয়ানন্দের সাথে দেখা হয়। প্রথমদর্শনেই জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর প্রেমে পড়ে যান এবং প্রেম নিবেদন করেন। ধীরে ধীরে চন্দ্রাবতীর সঙ্গে জয়ানন্দের প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়। জয়ানন্দ ছিলেন ব্রাহ্মণসন্তান। দুজনের মধ্যকার সম্পর্ক সফল পরিণতির দিকেই এগোয়। পিতা দ্বিজবংশীর সম্মতিতেই দুজনের বিয়ে স্থির হয়।
কিন্তু বিয়ের ঠিক আগেই জয়ানন্দের জীবনে আসে এক মুসলমান তরুণী। এতে চন্দ্রাবতীর আসন্ন প্রণয়কাব্য করুণ উপাখ্যানে পরিণত হয়। গীতিকাব্যটি রচনা করেছেন নয়ানচাঁদ ঘোষ, আনুমানিক ২৫০ বছর আগে। এটি নেয়া হয়েছে দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে।
ময়মনসিংহ গীতিকাগুলোতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি সংস্কৃতিই দেখতে পাওয়া যায়। এদের বৈশিষ্ট্য হল এই যে প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে প্রধানত ধর্মাশ্রিত হলেও এদের উপর ধর্মের প্রভাব খুবই অল্প। এগুলি অধিকাংশই প্রণয়মূলক। এদের মধ্যে ফুটে উঠেছে পূর্ববঙ্গের পল্লী-জীবনের অপূর্ব আলেখ্য। এই পল্লী-জীবনের পটভূমিকায় বর্ণিত হয়েছে নায়ক নায়িকাদের প্রেম-ভালবাসা। ষোড়শ শতকের প্রথম বাঙালি মহিলা কবি চন্দ্রাবতীকে যার নিজের জীবনই কিংবদন্তী হয়ে 'চন্দ্রাবতী' পালায় পর্যবসিত হয়েছে। তার লেখা রামায়ণ কথা একটি এমন রচনা যেখানে রামের গুণগানের বদলে সীতাদেবীর দুঃখ দুর্দশাই তিনি বর্ণনা করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা