২১ এপ্রিল, ২০১৯ ১১:৩৯

আমেরিকায় বাংলাদেশিদের অহংকার রাজুব ভৌমিক

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক

আমেরিকায় বাংলাদেশিদের অহংকার রাজুব ভৌমিক

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে কাউন্টার টেররিজম ব্যুরোর ক্রিটিক্যাল রেসপন্ড কমান্ডের সাহসী কর্মককর্তা রাজুব ভৌমিক (৩১)। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু কাজের মধ্য দিয়ে সারা আমেরিকায় বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সন্তান রাজুব ভৌমিক একইসাথে জন জে কলেজ অব ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং হস্টস কলেজের অপরাধ বিদ্যা ও আইন বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন।

অসাধারণ মেধাবি এবং সাহসী রাজুব সন্ত্রাস দমনের অফিসার হিসেবে ফুলটাইম চাকরি করছেন। কোনদিনই একত্রে ৪/৫ ঘণ্টা ঘুমাতে পারেন না। কাজের সাথে সঙ্গতি রেখে দুই শিফটে ২ ঘণ্টা করে ঘুমান রাজুব।

বাবার সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই ছোট-বড় দুই বোনসহ মাকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেছিলেন। নিজে লেখা-পড়া করেছেন, করছেন এবং করাচ্ছেন। ২০০৫ সালে প্রবাস জীবনের শুরুতেই মা-বাবার ম্যারিল্যান্ডের বাসায় উঠেছিলেন। ম্যাকডোনাল্ডে কাজের পাশাপাশি শেফার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন রাজুব।

কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হলেও খুব দ্রুত সেটি পরিবর্তন করেন ক্রিমিনাল জাস্টিসে। আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর করার পর চাকরি নেন একটি স্কুলে। ক্রয় করেন সাবওয়ে স্টোর। সেটি পরিণত হয় মা-বোনদের কর্মস্থল হিসেবে। কারণ, ইতিমধ্যেই তার বাবা চলে যাওয়ায় পুরো সংসারের দায় বর্তায় রাজুবের ওপর। তবুও হাল ছাড়েননি রাজুব। উচ্চ শিক্ষাও অব্যাহত রাখেন। এক পর্যায়ে সংসারের খরচ মেটাতে সাবওয়ে স্টোরটি বিক্রি করেন রাজুব।

একসময় তার ডাক পড়ে নিউইয়র্ক থেকে। পুলিশে চাকরি হয় তার। পোস্টিং ব্রঙ্কসে। ২০১২ সালে সেই চাকরিতে যোগদানের আগে তিনি এমএ করেন আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে 'ন্যাশনাল সিকিউরিটি এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি' বিষয়ে। এরপর ওয়াল্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ফরেনসিক সাইকোলজিতে এমএ করেন। ডক্টরেট করেন ক্যালিফোর্নিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে। একই ইউনিভার্সিটিতে পুনরায় ব্যবসায় প্রশাসনে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়েছেন রাজুব। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ডেও পিএইচডি করছেন সাংবাদিকতায়।

এত ডিগ্রির প্রয়োজন কেন কিংবা এসব করতে সময় কীভাবে বের করছেন হচ্ছে জানতে চাইলে রাজুব বলেন, শিক্ষার তো শেষ নেই। সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে চলতে হলে শিক্ষা থাকতে হবে। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষার বিকল্প নেই। রাজুব বলেন, ইচ্ছা থাকলেই সবকিছু করা যায়। আমি সেভাবেই চলছি।

এ মাসেই ডাউন টাউন ম্যানহাটানে হাডসন নদীতে ঝাঁপিয়ে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। নদীতে ৪৯ বছর বয়সী এক আমেরিকান হাবুডুবু খাচ্ছেন দেখেই রাজুব তার দেহ থেকে বন্দুকের বেল্ট খুলেন এবং ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীতে। রাত দেড়টায় উদ্ধার করেন লোকটিকে। এর আগে আরেক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন সাবওয়ের নিচ থেকে। ব্রঙ্কসে দু’বছরের এক শিশুকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন রাজুব।

কেন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে গেছেন জানতে চাইলে রাজুব বলেন, মানবিক দায়িত্ব থেকে। এছাড়া, আমি এবং এই ইউনিটের অফিসাররা এত বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সাথে পরিচিত যে, বিপদগ্রস্ত লোকজনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করি না। সেটি আমার দায়িত্বের বাইরে হলেও নিজেকে নির্লিপ্ত থাকতে পারি না। এমন অসহায় মানুষদের রক্ষা করতে পারলে নিজেও স্বাচ্ছন্দবোধ করি। ভালো লাগে যে মানুষের উপকার করতে পারলাম।

এখানেই শেষ নয়, রাজুবের ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের জন জে কলেজে পাঠ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত। সনেট লিখেছেন ৫০০টি।

২০১২ সালেই বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন রাজুব। তার একমাত্র কন্যা সন্তানের বয়স দুই বছর। স্ত্রী নিউইয়র্কে একটি কলেজে ব্যাচেলর করছেন শিশু-শিক্ষা বিষয়ে। অর্থাৎ তিনিও সেবামূলক কাজে যুক্ত হতে আগ্রহী। 

সাহসী এবং মানবিকতার জন্যে বেশ কটি পুরস্কার পেয়েছেন রাজুব। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও সিটি মেয়র, সিটি কাউন্সিলের পুরস্কারও পেয়েছেন। এছাড়া, চলতি পথে কতশতজনের শুভেচ্ছা-অভিনন্দন পান-তার ইয়ত্তা নেই। এটিই তার পরম তৃপ্তি। মানুষের ভালবাসায় রাজুব আরো বিচক্ষণতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে পেশাগতভাবে অনেক উঁচুতে যেতে আগ্রহী। আর এর মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশ এবং বাঙালিরাই গর্বিত হবেন এমনটাই প্রত্যাশা চৌকষ পুলিশ অফিসার রাজুবের।

প্রবাসের তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে রাজুব বলেন, একদম সময় নষ্ট করবে না। অলস সময় কাটাবে না। সব লক্ষ্য সফল হবে না। তাই বলে ভেঙে পড়বে না। নতুন লক্ষ্য সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। বেশি বেশি করে বই পড়তে হবে। প্রতিনিয়ত লেখারও অভ্যাস করতে হবে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে তার অভিমত জানতে চাইলে রাজুব বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি আগের থেকে লক্ষ্য করার মত। কিন্তু আরো অনেক দূরে আমাদেরকে যেতে হবে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এখানকার মত সুযোগ সুবিধা পায় না। তাই তারা পিছিয়ে আছে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আরও এগিয়ে যাবে।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর