উত্তর মেরুতে সর্ববৃহৎ অভিযান শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে। ওইদিন জার্মান গবেষণা জাহাজ পোলারস্টারন নরওয়ের ট্রমসো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে উত্তর মহাসাগরের উদ্দেশে। তাদের লক্ষ্য– উত্তর গোলার্ধের কাছে সাইবেরিয়ান জলসীমাতে বরফের সঙ্গে নোঙর করা। আগামী এক বছর এই জাহাজ বরফের সঙ্গেই আটকে থাকবে।
এই আন্তর্জাতিক উত্তর মেরু অভিযানের নামকরন করা হয়ে মোজাইক (MOSAiC - the Multidisciplinary drifting Observatory for the Study of Arctic Climate). এক বছরেরও বেশি সময়কালীন এই অভিযান জলবায়ু সম্পর্কিত যে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে তা আমাদের জ্ঞানের পরিসীমাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিবে। মেরু অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাব গবেষণা করে আগামীতে সমগ্র পৃথিবীতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা সহজেই অনুমান করা যাবে। এই অভিযানটি পরিচালনা করছে জামানির আলফ্রেড অওেগার ইন্সিটিউট। এই অভিযানটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তর মেরুতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু দুর্গম এবং হিম ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে উত্তর মেরুতে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তরের অভাব রয়েছে। কোনো একটি দেশের পক্ষে এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আর্থিক সামর্থ্য ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও অভাব আছে। এই কারণে ১৯টি দেশের গবেষকরা একত্রিত হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করেছে উত্তর মেরুর উদ্দেশে। এই অভিযানের প্রধান জাহাজ পোলারস্টারনকে সাহায্য করবে চীন, সুইডেন ও রাশিয়ার ৫টি অত্যাধুনিক জাহাজ। এছাড়া হেলিকপ্টার এবং জার্মান বিমান গবেষকদের বিভিন্ন সময়ে আনা নেওয়া ও তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করবে।
অভিযানে সমুদ্রপৃষ্টের ৩৫ হাজার মিটার উচ্চতায় এবং ৪০ হাজার মিটার নিচ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। গবেষকদের মেরু ভাল্লুক থেকে রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষণিক ৬ জন প্রহরী নিয়োগ থাকবেন। ৩৯০ দিনের এই অভিযানে ১৫০ দিন থাকবে ২৪ ঘণ্টা রাত, যখন তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত নামতে পারে। জরুরি যাতায়াতের জন্য বরফের ওপর ১ হাজার ১০০ মিটার লম্বা রানওয়ে তৈরি করা হবে। এই অভিযান পরিচালনার খরচ ধার্য করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার। এর সঙ্গে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং গবেষকদের জাহাজে থাকার খরচ। একজন গবেষককে এক রাত জাহাজে থাকার জন্য দিতে হবে ১ হাজার ৬৬০ মার্কিন ডলার। এই অভিযানের সর্বমোট খরচ ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কানাডা থেকে ৩ জন গবেষক এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন বাংলদেশিও রয়েছেন। কানাডার ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের পিএইচডি গবেষক বাংলাদেশের মল্লিক সেজান মাহমুদ এই মেরু অভিযানের ৬১ দিন পোলারস্টারন জাহাজে অবস্থান করবেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। তার গবেষণার লক্ষ্য স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবির মাধ্যমে মেরু অঞ্চলের বরফগলা পর্যবেক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
উল্লেখ্য, মল্লিক সেজান মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক, যিনি বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডাতে অবস্থান করছেন। তিনি তার গবেষণার জন্য কানাডা সরকারের সবচেয়ে সম্মানিত ভ্যেনিয়ার গবেষকের মর্যাদা অর্জন করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন