যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। ১৩ এপ্রিল সোমবার ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মারা গেছেন ৭১৭ জন। প্রতিদিনই মৃত্যুর হার বাড়ছে অস্বাভাবিক গতিতে। এতে করে মুসলমানদের দাফন-কাফনে হিমশিম খাচ্ছে ফিউনারেল সার্ভিসগুলো। বর্তমানে গার্ডেন্স অব পিস এবং ইডেন কেয়ার এই দুই ফিউনারেল সার্ভিস করোনা-আক্রান্ত লাশের দাফন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তসলিম ফিউনারেল সার্ভিস তাদের স্টাফ সংকট ও ইকুইপমেন্ট সুবিধার অভাবে করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করতে পারছে না। তাছাড়া ব্রিক লেন মসজিদ ফিউনারেল সার্ভিসের একজন পরিচালক হঠাৎ করে কনোরার উপসর্গে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের সার্ভিসও বন্ধ রয়েছে।
এমতাবস্থায় ইস্ট লন্ডন মসজিদ অ্যান্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার হাজী তসলিম ফিউনারেল সার্ভিসের সাথে সমন্বয় করে করোনা আক্রান্ত লাশের জানাজা ও দাফনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইস্ট লন্ডন মসজিদের ফাইন্যান্স অ্যান্ড এনগেইজমেন্ট ডিরেক্টর দেলওয়ার খান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পূর্ব লন্ডনের খ্রিস্টান স্ট্রিটে রেলওয়ে আর্চের একটি ইউনিট ভাড়া নিয়ে ফিউনারেল সার্ভিস প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে বিলডার ফিউনারেল সার্ভিসের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করবে। পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং দাফন-কাফন শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদী। ফিউনারেল সার্ভিসটি চালু হলে আপাতত ৩৫টি মরদেহ একসঙ্গে রাখা যাবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরো সম্প্রসারণ করা যাবে। তখন প্রায় ৭০টি মরদেহ রাখা যাবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, লাশ গোসল দেয়া ও দাফন-কাফনের জন্য ৬০ জন ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পিপিইসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি অর্ডার করা হয়েছে। সাউথ লন্ডনে সিডকাপের ইটারনেল গার্ডেন এবং গার্ডেন্স অব পিসসহ বিভিন্ন গোরস্থানে লাশ দাফন করা হবে। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা ছাড়াও অন্য যেকোনো এলাকায় মুসলমান মারা গেলে এখানে দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। শুধু তসলিম ফিউনারেলই নয়, অন্য যেকোনো ফিউনারেল সার্ভিস হাসপাতাল থেকে লাশ এনে খ্রিস্টান স্ট্রিটে গোসল দেয়া, কাফন পরানো এবং দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। ইটারনেল গার্ডেনে লাশ দাফনের খরচ গার্ডেন্স অব পিস থেকে অনেক কম। সেখানে প্রায় ৭ হাজার কবরের জায়গা আছে।
সাউথ লন্ডনের সিডকাপে টাওয়ার হ্যামলেটস মালিকানাধীন ইটারনেল গার্ডেন গোরস্থান। যেখানে ৭ হাজার কবরের জায়গা আছে। মহামারির সময়ে যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে এমন মুহূর্তে হাজী তসলিম ফিউনারেল বন্ধ রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তসলিম ফিউনারেল ইস্ট লন্ডন মসজিদের নিজস্ব সার্ভিস নয়। কমিউনিটির স্বার্থে তাদেরকে মসজিদের বেইজমেন্ট ভাড়া দেয়া হয়েছে। তাদের কার্যক্রম সবসময়েই চালু ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের কয়জন স্টাফ করোনা আক্রান্ত সন্দেহে কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ায় তিনদিন সার্ভিস বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এরপর থেকে সার্ভিস অব্যাহত আছে। তবে করোন ভাইরাসে আক্রান্ত লাশ দাফন-কাফনের জন্য যে ধরনের সুবিধা প্রয়োজন সেই সুবিধা না থাকায় আপতত তসলিম ফিউনারেল করোনার লাশে দাফন করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতেই আমরা কমিউনিটির মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় খ্রিস্টান স্ট্রিটের জায়গাটি ভাড়া করে জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছি। কারণ প্রতিদিন শত শত মুসলমান মারা যাচ্ছেন। গার্ডেন অব পিস ও ইডেন কেয়ারের পক্ষে এত মানুষের দাফন কাফন করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই এই ফিউনারেল সার্ভিস চালু হবে এবং আমরা সংকট কাটিয়ে ওঠতে পারবো ইনশা’আল্লাহ।
এদিকে হাজী তসলিম ফিউনারেল সার্ভিস থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৮ মার্চ তাদের কয়েকজন স্টাফ আকস্মিকভাবে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে চলে যান। ফলে তিনদিনের সার্ভিসে ব্যঘাত ঘটে। অবশ্য ৩১ মার্চ তারা পুনরায় ফিউনারেল সার্ভিস খুলেন এবং করোনা আক্রান্ত মরদেহ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া মানুষের জানাজা ও দাফন কাফন কার্যক্রম চালু রাখেন। আইসোলেশনের সময়সীমা শেষ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত অনেক স্টাফ কাজে ফিরতে পারেননি। তাছাড়া ইস্ট লন্ডন মসজিদের বেইজমেন্ট যেখানে বর্তমানে ফিউনারেল সার্ভিসের কাজ চলছে সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মরদেহ দাফনের মতো পর্যাপ্ত জায়গা ও সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান নেই। সেখানে মাত্র ৪টি মরদেহ রাখার সুবিধা আছে। এখন ইস্ট লন্ডন মসজিদের উদ্যাগে খ্রিস্টন স্ট্রিটে যে অতিরিক্ত ফিউনারেল সার্ভিস চালু হচ্ছে সেখানে করোনা আক্রান্ত লাশের দাফনে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, গার্ডেন্স অব পিসে যেখানে একটি মরদেহ দাফনে ৩,৯০০ পাউন্ড লাগে সেখানে ইটারনেল গার্ডেনে খরচ পড়বে সব মিলিয়ে ১,৮৩৩ পাউন্ড। উল্লেখ্য, টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ১০ বছর আগে ইটারনেল গার্ডেন গোরস্থানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কাউন্সিলের তৎকালীন মেয়র লুৎফুর রহমান। তখন একটি কবরের জায়গা কিনতে খরচ পড়তো মাত্র ৬শ পাউন্ড। গত ১০ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩৩ পাউন্ড। টাওয়ার হ্যামলেটসে থেকে গার্ডেন অব পিস যতটুকু দূরত্বে অবস্থিত ইটারেল গার্ডেনের দূরত্বও প্রায় ততটুকু। কমিউনিটির মানুষ বেশ আশাবাদী, নতুন ফিউনারেল সার্ভিস চালু হলে লন্ডনে বাংলাদেশি মুসলমানদের লাশ দাফনে আর দুশ্চিন্তা থাকবে না।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক