মানসিক বিষন্নতায় চরমভাবে আক্রান্ত দু’ভাই কর্তৃক মা-বাবা-বোন ও নানীকে গুলি করে হত্যার পর বাংলাদেশি বংশোদ্ধভূত দুই আমেরিকান ভাইয়ের আত্মহত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটি শোকাচ্ছন্ন।
গত মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কমিউনিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী, ৩ জনের লাশ আজ বুধবার নেতা-কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অবশিষ্ট তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরের মধ্যেই হস্তান্তর হলে, বাদ আসর টেক্সাসের ডালাস সংলগ্ন এলেন সিটি মসজিদে জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরপর বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে ডেন্টন সিটির মুসলিম গোরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি চলছে। এ তথ্য জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস’-এর জেনারেল সেক্রেটারি নাহিদা আলী। তবে সবটাই নির্ভর করছে অবশিষ্ট তিনজনের লাশ প্রাপ্তির ওপর।
নাহিদা আরও উল্লেখ করেন, আজ বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এলেন সিটিতে সেলিব্রেশন পার্কে নিহতদের স্মরণে ‘মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি’ অনুষ্ঠিত হবে। আশপাশের সকল সিটির বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ সম্মিলিতভাবে এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন বলেও জানান নাহিদা আলী।
এদিকে, নিহত পরিবারের প্রধান তৌহিদুল ইসলামের বড়ভাই মঙ্গলবার টেক্সাসের এলেন সিটিতে এসেছেন ফ্লোরিডা থেকে। ছোট ভাইয়ের পরিবারসহ সকলে এমন দু:খজনক পরিস্থিতির নিষ্ঠুর ভিকটিম হওয়ায় তিনি শোকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু সকলের দোয়া চাইছেন বলে জানান টেক্সাসের ট্র্যাভেল ব্যবসায়ী ও পরিবারের অন্যতম বন্ধু শাহীন হাসান। তিনি বলেছেন, 'তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে সকলের প্রাণ ঝরেছে বুলেটে। কার শরীরে কটি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে সেটিও তারা পুলিশের ডিটেকটিভকে অবহিত করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে শাহীন জানান, লাশ উদ্ধারের সময় ঐ বাসা থেকে দু’ভাইয়ের ৬টি নোট বুক পেয়েছে পুলিশ।' সেগুলোসহ তাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিফোন পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ফারহান তৌহিদ (১৯) এবং তার বড়ভাই তানভির তৌহিদের (২১) মেডিকেল রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ দু’জনের বুলেটেই পরিবারের সকলের দু:খজনক মৃত্যু ঘটেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন। কারণ হত্যাকান্ডের পূর্বাপর পরিস্থিতির আলোকে ইন্সটাগ্রামে দীর্ঘ এক বিবৃতি দিয়েছে ফারহান তৌহিদ। দু’ভাইয়ের গুলিতে নিহতরা হলেন বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বোন পারভিন তৌহিদ (১৯) এবং নানী আলতাফুন্নেসা (৭৭)।
নাহিদা আলী আরও জানান, 'একটি পরিবারের সকলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে হতবাক সকলে। আর কেউ যাতে এমন দু:খজনক পরিস্থিতির ভিকটিম না হয় সে জন্য সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সন্তানের যে কোন সমস্যায় যেন অভিভাবকেরা আন্তরিক অর্থেই সহায়তার হাত প্রসারিত করে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।'
জানা গেছে, তৌহিদুল ৮ বছর আগে টেক্সাসের এই সিটিতে বসতি গড়ার আগে নিউইয়র্কে বাস করতেন। তার দেশের বাড়ী ছিল পুরান ঢাকায়। একটি রেস্টুরেন্টে ম্যানেজারের চাকরি ছেড়ে সর্বশেষ তিনি টেক্সাসে সিটি ব্যাংকে চাকরি করতেন। আপাতদৃষ্টিতে তাকে সুখী পরিবারের কর্তা হিসেবে সকলে ভাবলেও ভেতরে দুই পুত্র নিয়ে ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন সেটি সোমবারের (৫ এপ্রিল) আগে কেউই উপলব্ধিতে সক্ষম হননি।
এর আগেও ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোতে হাসিব বিন রাব্বি কর্তৃক তার মা-বাবাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এরপর কানাডার টরন্টোতে মেনহাজ জামান তার মা-বাবা-বোন-নানীকে হত্যা করে। এ দু’জনই পরে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির