বরফাচ্ছন্ন কানাডার প্রায় ৮ মাসই বরফে আচ্ছাদিত থাকে। এ বছর রমজান মাসের শুরুতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। করোনা আর প্রচন্ড বৈরি আবহাওয়াতেও ম্লান করতে পারেনি প্রবাসী বাঙালিদের ইফতার আয়োজন।
বাংলাদেশের মত এখানেও বাঙালিরা ছোলা মুড়ি মেখে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির অপেক্ষায় থাকে। ইফতারের এ আয়োজনে আরও থাকে পিঁয়াজি, কলা, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর, চিকেন হালিম আর শরবত। বিশেষ খাবার হিসেবে কমলা, আঙুর, আপেলসহ নানা দেশের বৈচিত্রময় ফল। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতেও বেচাকেনা চলছে জমজমাট ইফতারিসহ খিচুরি ও বিরিয়ানি।
প্রবাসী মুসলিম বাঙালিরা কানাডায় থাকলেও ভুলে যায়নি তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির কথা। বিগত বছর গুলোতে তার প্রতিফলন ঘটতো তারাবির নামাজের সময় যখন ছোট ছোট শিশু কিশোররা অভিভাবকদের সাথে মসজিদে আসতো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে এখন তা আর হচ্ছে না।
ক্যালগেরিতে বাঙালিদের রয়েছে নিজস্ব একটি মসজিদ। কিন্তু গত দুই বছর কোভিড-১৯ এর কারনে গৃহবন্দি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে মসজিদের রূপ ভিন্ন আকার ধারণ করেছে। দূরত্ব বজায় রাখা আর সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানতে যেয়ে অনেকটাই স্থবির বিভিন্ন কার্যক্রমের। মসজিদে সবাই মিলে এক সাথে ইফতার করা আর হচ্ছে না।
বিগত বছর গুলোতে প্রবাস জীবনের যান্ত্রিকতাময় দিনগুলোতে ইফতার আর তারাবি নামাজ শেষে এই সময়টাতে প্রবাসী বাঙালিরা মিলিত হতো একে অপরের সাথে। পুরো পরিবেশ পরিণত হতো এক ভিন্ন ইমেজের। কিন্তু গত দুইবছর এর চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। এশিয়ান এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশে সবাই মিলে যখন মসজিদ টিতে মিলিত হতো তখন মনে হতো যেন একখন্ড বাংলাদেশ। করোনা মহামারী যেন সবকিছু ম্লান করে দিয়েছে।
এরোমা ইন্টারন্যাশনাল এন্ড প্রিমিয়াম ক্লাসিক' এর ডিরেক্টর আতিকুল ইসলাম কলিন্স জানান, মসজিদে গত দুইবছর যাবৎ আমরা বাংলাদেশের আমেজে ইফতার এবং তারাবির নামাজ আদায় করতে পারছি না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ইফতার এবং তারাবির নামাজ বাসায় আদায় করছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন এই মহামারী থেকে সারা বিশ্বের উম্মাহর যেন হেফাজত দান করেন এবং আগের মত রমজান পালন করার তৌফিক দান করেন।
স্বদেশী বাজার ফুডস্ এন্ড ক্যাটারিং, এর স্বত্বাধিকারী নাজমুল আহসান বলেন, বাংলাদেশের স্বাদের সব ধরনের খাবার এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এই রমজানে ইফতারের আইটেমসহ বিরিয়ানি, তেহারী এবং লাচ্ছিরও ব্যবস্থা রয়েছে।
উৎসব সুইটস এন্ড রেস্টুরেন্ট এর স্বত্বাধিকারীমোঃ ফিরোজ ইফতেখার বলেন, আমরা আমাদের রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশের স্টাইলে শাহী হালিম, শাহী জিলাপি, বেগুনি, পিয়াজু, আলুর চপ,ছোলা এবং অন্যান্য আইটেম বিক্রি করে থাকি।
ক্যালগেরি প্রবাসী সৈয়দা রওনক জাহান বলেন, আমরা কঠিন এক সময় অতিবাহিত করছি। অনেকেই ইতিমধ্যেই তাদের আপনজনদের হারিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের এই মহামারী থেকে মুক্তি দিবেন এটাই আমাদের পার্থনা।
সিয়াম সাধনার এই মাসে সংযম আর আত্মশুদ্ধির মধ্য দিয়ে যাবতীয় ভোগ বিলাস, অন্যায়, অপরাধ, হিংসা, বিদ্বেষ, সংঘাত পরিহার করে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনে বয়ে নিয়ে আসবে শান্তির বার্তা ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের এমনটাই প্রত্যাশা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত