১০ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:১৭

বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক ফিরে পাক তাদের জন্মগত অধিকার

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

বিশ্বের প্রতিটি নাগরিক ফিরে পাক তাদের জন্মগত অধিকার

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

১০ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এ দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালন করা হচ্ছে।
 
আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত মানবাধিকারের মূলনীতিগুলিকে বাংলাদেশ সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিকের মানবাধিকারের সুরক্ষায় বিভিন্ন বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে।’ সংবিধানে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, বিশ্রাম ও চিত্ত বিনোদন এবং সামাজিক নিরাপত্তার মত অর্থনৈতিক ও সামাজিক  মানবাধিকারসমূহ এবং নাগরিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুরক্ষার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি নিয়ে গর্ব করছি। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের কথা বলছি। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের উন্নতি এবং অচিরেই দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশে পরিণত হবো বলে আশা করছি। দেশের অর্থনৈতিক এই উন্নতি এবং সমৃদ্ধি নিঃসন্দেহে গর্বের। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। এ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে টেকসই করতে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিটিকেও দৃঢ় করতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার এ দিকে গভীর মনোযোগ দেবে। দেশের মানবাধিকার, সুশাসন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অধিক মনোনিবেশ করবে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, মানুষের কল্যাণের জন্যই রাষ্ট্র। মানুষ যদি নিরাপদে জীবনযাপন করতে না পারে কিংবা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে, তবে তা কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না। কাজেই সবার আগে আমাদের মানবাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অধিক গুরুত্ব দেবে বলে আমরা আশা করি।

মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশের সরকার। সরকার তার প্রশাসনিক ও বিচারিক কাঠামোকে সঙ্গী করে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সমাজের কোনো স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত সেইখানে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। বিচার বিভাগ সব দিক বিচার করে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করবে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা প্রতিনিয়তই বৈষম্যের ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। জাতিগত বৈষম্যও সংখ্যালঘুদের জীবন পর্যুদস্ত করে রাখে। বলা প্রয়োজন, এসকল বঞ্চনা ও বৈষম্য প্রকটভাবে দৃষ্ট যেমন, তেমনই প্রচ্ছন্ন বঞ্চনা সমাজের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। রাষ্ট্রের একার পক্ষে সকল মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সকল সচেতন মানুষকে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে এবং সম্মিলিত প্রতিবাদ ও তৎপরতার মধ্য দিয়ে সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর