৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৯:৩৩

স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ইমরান খান

স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ন্যায়ের পক্ষে প্রতিবাদী এক নাম। শৈশব থেকেই যার মেধা-মননে জায়গা করে নিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেখানেই কণ্ঠ ছেড়েছেন ন্যায়ের পক্ষে। নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মানুষের অধিকার আদায়ে লড়েছেন আমৃত্যু।  

১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ার অভিযোগ এবং স্কুলছাত্রদের পক্ষ থেকে তা সারানোর জন্য দাবি তুলে ধরেন। নির্যাতন এসেছে। অত্যাচারের খড়্গ নেমেছে। বার বার তাঁকে যেতে হয়েছে কারাগারে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দিনের পর দিন একা কাটিয়েছেন কারাকক্ষে। তবু ন্যায়ের পথ থেকে পিছু হটেননি। এ গুণটি তাঁর কিশোর জীবনেই ফুটে উঠেছে।

১৯৭৩ সালে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে কিউবার সমাজতান্ত্রিক নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। সাহস ও ব্যক্তিত্বে এ মানুষটি হিমালয়ের মতোই উঁচু।’ মিসরের বিখ্যাত সাংবাদিক হাসনাইন হাইকেল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন- ‘শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নন, সমগ্র বিশ্বের নেতা।’

বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম আর অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ বাংলাদেশ। আর যতদিন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ থাকবে; বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা থাকবে; পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা বহমান থাকবে; যতদিন জাতি হিসেবে বাঙালির পরিচয় থাকবে, ততদিন এদেশের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব, চির অম্লান হয়ে বাঙালি চেতনার এক অনির্বাণ শিখা হিসেবে প্রজ্বলিত হয়ে থাকবেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিশোর বয়স থেকেই সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে ধীরে ধীরে একজন নেতা হয়ে উঠছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে বঙ্গবন্ধু নেতা হননি, বন্দুকের নল ঠেকিয়ে কিংবা গায়ে উর্দি চাপিয়ে তাকে নের্তৃত্ব লুট করে নিতে হয়নি। একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন শেখ মুজিব, আপন মহিমায় হয়ে ওঠেন বিশ্বের এমন একজন বিরল নেতা যার তর্জনী নির্দেশে একাত্ম হয়েছিল একটি জাতি। যার নামে বুকের খুন ঢেলে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। অভ্যুদয় হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ভালোবাসা, মানবিকতাবোধ, প্রাণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শী চিন্তা, সাংগঠনিক ক্ষমতা আর নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান মানুষকে মুগ্ধ করেছিলেন। স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে তিনি জাতির জনকের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এদেশের মানুষকে ভালোবেসে তিনি উপাধি পেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু’। 

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি তাঁর শত্রুভাবাপন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে দ্বিধা করেননি। কোনো সংলাপ বয়কট বা বর্জনের রাজনীতি তিনি পছন্দ করতেন না। পাকিস্তান সরকার তাঁকে অব্যাহতভাবে নাজেহাল করেছে, কিন্তু তারপরও তাঁরা আলোচনার বৈঠকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তাতে যোগ দিয়েছেন এবং নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বঙ্গবন্ধু যে লিখিত জবানবন্দি দেন, তার সঙ্গে শুধু নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ তুলনীয়।

আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর বলিষ্ঠ, সুযোগ্য, সুদৃঢ়, অনমনীয়, অকুতোভয়, সর্বোপরি দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বর্ণ শিখরে।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর