১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১০:৪২

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে

ইমরান খান

বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে

আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরআগে একাত্তরে রেসকোর্স ময়দানের ৭ মার্চের বিশাল ঐতিহাসিক জনসভায় বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্পষ্টই ঘোষণা করেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছিলেন। 

৭ই মার্চের চূড়ান্ত ঘোষণায় প্রস্তুত জাতি মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুসেনাদের প্রতিরোধে। সেই রাতেই রাজারবাগ, পিলখানায় থাকা বাঙালি বীর যোদ্ধারা বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অস্ত্র তুলে নেন বিভিন্ন সেনানিবাসে থাকা সৈনিকরাও। মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত জাতি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমেই কঠোরতর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৯ মাস ধরে চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জাতি এ বছর বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করছে।

পাকিস্তানিদের অব্যাহত শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্তরের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা না দিয়ে শুরু করেছিল বাঙালিনিধন। ৯ মাস ধরে চালিয়েছে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই গণহত্যায় দলগতভাবে অংশ নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। গড়ে তুলেছিল রাজাকার, আলবদরের মতো বিভিন্ন বাহিনী। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে তারা দমাতে পারেনি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যাঁরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একাত্তরের ঘাতকরা ফিরে আসে রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার এবং ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলতে থাকে। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশ ক্রমে এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। ২০১৫ সালে আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০১৮ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। গত বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে এ এক অনন্য অর্জন। স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র না থাকলে হয়তো আরো অনেক আগেই দেশ এই অবস্থানে পৌঁছে যেত।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে বাস্তবিকই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। যাত্রাপথের যাবতীয় আবর্জনাকে পরিষ্কার করে উন্নয়নের গতিকে মসৃণ করতে হবে। এখানে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ও দৃঢ় নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। কোনো অন্যায় বা অসত্যকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খাদ্যে ভেজাল, মাদক, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ইত্যাদি সব ইস্যুতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। একটি জনকল্যাণমূলক আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মনোযোগী হতে হবে।

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। আমরা আজ স্বাধীন জাতি। এই স্বাধীনতা ছিল বাঙ্গালি জাতির দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। পরম আকাঙ্খিত বস্তু। আমাদের স্বপ্ন ছিল, আত্মবিশ্বাস ছিল। তাই আমরা ধৈর্য হারাইনি। সফল হয়েছি।
পরিশেষে বলতে হচ্ছে, লাখো প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হবে, যখন দারিদ্র্যমুক্ত হবে দেশ, দেশের সব মানুষ হবে স্বনির্ভর। 

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর