বৃষ্টিকে আমি ভালোবাসি। দুপুরে বৃষ্টি কলেজের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। তাকে কলেজে পৌঁছে দিতে গেটের সামনে দাঁড়ানো থাকে তাদের টয়োটা করল্লা উনিশো নিরানব্বই মডেলের টকটকা লাল রঙের প্রাইভেট কার। গাড়ির পেছনে সিটে অভিজাত ভঙ্গিমায় শিরদাঁড়া টানটান করে বৃষ্টি বসে থাকে, বৃষ্টির দৃষ্টি থাকে নিচুতে। সবসময় সে বই পড়তে পড়তে গাড়িতে চলাফেরা করে। কারও দিকে চেয়ে দেখে না, আশপাশে মুখ ঘোরায় না। ফলে দর্শনার্থী বেশে দাঁড়িয়ে থাকা আমাকে বৃষ্টি দেখতে পায় না। আমি তবুও দাঁড়িয়ে থাকি। বৃষ্টির গাড়ি হর্ন চেপে আমাকে অতিক্রম করে গেলে আমি ধীর পায়ে হেঁটে ময়না মামার চায়ের দোকানে গিয়ে বসি আর অপেক্ষা করি বৃষ্টির ফিরে আসার। এভাবেই একদিন চায়ের দোকানে বসে আমি বৃষ্টিকে নিয়ে আকাশ কুসুম ভাবছি। দেখলাম বৃষ্টির গাড়ি ফিরে আসছে, আমি তড়াক করে উঠে বসলাম। আমাকে অবাক করে লাল গাড়িটি আমার ঠিক সামনেই থামল। নেমে আসল ড্রাইভার মোতালেব। আমার পাশেই বসে চায়ের অর্ডার দিল। আমি মোতালেব ড্রাইভারের কাছে এগুলাম, ডাবল লিকারে কড়া দুধ চা, নোনতা বিস্কুট, বনরুটি খাইয়ে মোতালেব ড্রাইভারকে মুহূর্তে আমার হাতে নিয়ে আসলাম। কথায় কথায় জানতে পারলাম আগামী সপ্তাহে মোতালেব ড্রাইভার এক মাসের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছে, বৃষ্টিদের ড্রাইভারের পোস্ট খালি হবে, লোক খোঁজা হচ্ছে। আমার দম বন্ধ হয়ে এলো। এ তো মেঘ না চাইতেই তুফান! কিন্তু সমস্যা হলো আমি গাড়ি চালাতে পারি না। হাতে সপ্তাহখানেক সময় আছে। আমি সেদিন সন্ধ্যায় ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম। চরম অধ্যবসার জোরে এক সপ্তাহের মধ্যে ড্রাইভিং শিখে ফেললাম। মোতালেব ড্রাইভারের রেফারেন্সে চাকরিটাও হয়ে গেল। বৃষ্টিদের বাড়িতে ড্রাইভার হয়ে ঢুকছি, ঘরজামাই হয়ে থেকে যাওয়ার প্ল্যান। বৃষ্টিকে নিয়ে আজ আমি প্রথম কলেজে যাব। সুগন্ধি লাগিয়ে গায়ে নতুন কেনা শার্ট প্যান্ট ব্লেজার চাপিয়ে, পায়ে চকচকে সু গলিয়ে আমি বৃষ্টির বাড়িতে যাই, গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে অপেক্ষা করি গেটের সামনে। আকাশ কালো করেছে, বৃষ্টি নামবে। চমৎকার হবে! বৃষ্টি বাসা থেকে নেমে এসে গাড়িতে চড়ল। মাথা নিচু, সামনে বই খোলা, বৃষ্টি পড়ায় ডুবে আছে। আমি এক নজর দেখে গাড়ি স্টার্ট দিলাম, গাড়ি চলছে, আমার মন ফুরফুর করছে। ব্যাক মিররে কিছুক্ষণ পর পর বৃষ্টিকে দেখছি। আহা কি শান্ত সিগ্ধ সরল মুখ! বৃৃষ্টি নেমেছে, এফএম রেডিওতে বৃষ্টির দিনে প্রেমের গান বাজছে। গানের তালে আমিও গুনগুনিয়ে সূর মেলাচ্ছি। মনে মনে কল্পনা করছি একগুচ্ছ কদম ফুল হাতে বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেড়ে আমি বলব, ‘বৃষ্টি চলো, আজ বৃষ্টিতে ভিজে একসাথে আদা চা পান করি।’ আমি ভাবছি হঠাৎ কানে ভেসে এলো, ‘বায়ে দাঁড়ান, বায়ে দাঁড়ান।’ মিররে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি গাড়ি সাইডে দাঁড় করাবার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কলেজ এখনো খানিকটা দূরে। এখানে কেন দাঁড়াতে বলল! আমি গাড়ি দাঁড় করালাম। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছেলে পিছনের দরজা খুলে গাড়িতে চড়ে বসল। আমি কিছু বলার আগেই বৃষ্টি আমাকে বলল, ‘ড্রাইভার আংকেল, গাড়ি থেকে নেমে আপনি সামনের দোকানে এক কাপ চা খেয়ে আসুন। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে একটু একা গল্প করব’, বলেই বৃষ্টি আমার দিকে ১০ টাকার নোট বাড়িয়ে ধরল। স্তব্দ আমি ১০ টাকার নোট হাতে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালাম। মুষল বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছে। আমি এক বৃষ্টিকে গাড়িতে রেখে আরেক বৃষ্টিকে সঙ্গী করে হেঁটে সামনে এগোলাম।
শিরোনাম
- সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে খালেদা জিয়া
- সাদিয়া আয়মানের অভিনয়ে মুগ্ধ অনিরুদ্ধ রায়
- গাইবান্ধা কারাগারে অসুস্থ হয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
- আদাবরের শীর্ষ ছিনতাইকারী ‘চোরা রুবেল’ গ্রেপ্তার
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
- শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে বিভাগীয় শহরে বাস দিল জবি
- ভূমিকম্প অনিশ্চিত তাই বিদ্যালয় বন্ধের সুযোগ নেই: প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা
- ঢাকা মেডিকেলে একাডেমিক কার্যক্রম আগামী ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ
- বাগেরহাটে ৩ বান্ধবীকে শ্লীলতাহানি ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
- হাসিনা-কামালকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ কার্নিভাল-৩ অনুষ্ঠিত
- নভেম্বরের ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২১৩ কোটি ডলার
- ফ্যাসিজম সহ্য করা হবে না, নিজেরাও ফ্যাসিষ্ট হবো না: তানিয়া রব
- বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
- ৮১ দেশি পর্যবেক্ষকের সঙ্গে ইসির সংলাপ ২৫ নভেম্বর
- ‘ফ্যামিলি ম্যান থ্রি’: মনোজ নয়, জয়দীপের সিজন?
- টিকটক ইউজারদের জন্য চালু হলো টাইম অ্যান্ড ওয়েল-বিয়িং ফিচার
- পটুয়াখালীতে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন
- বাংলাদেশের কাল ব্রুনাই চ্যালেঞ্জ
আহারে বৃষ্টি!
রাফিউজ্জামান সিফাত
প্রিন্ট ভার্সন