সোমবার, ২৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মেসেজের যুগ

ইকবাল খন্দকার

মেসেজের যুগ

এ যুগে কবুতর মেসেজ আদান-প্রদান করলে নোটিফিকেশন সাউন্ড হতো ‘বাকবাকুম, বাকবাকুম’

আমার এক বড়ভাই বললেন, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! আর এখন কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই না দিন যাচ্ছে। উফ! আর পারি না। আমি বললাম, প্রথমে তো মনে করেছিলাম গান শোনাচ্ছেন বুঝি। আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! কিন্তু গান বাদ দিয়ে শুরু করলেন যন্ত্রণার কথা। আপনার এত কীসের যন্ত্রণা, বলেন তো শুনি! বড়ভাই বললেন, মোবাইলের যন্ত্রণা। সারা দিন টুংটাং করে মেসেজ আসতেই থাকে। এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না। অথচ আগে টিঅ্যান্ডটি ফোন ছিল। টিঅ্যান্ডটি ফোনে না ছিল মেসেজ সিস্টেম, না ছিল টুংটাং আওয়াজ। এই জন্যই বলি, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম। আচ্ছা, বিজ্ঞান তো এখন অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছে। ভবিষ্যতে আরও করবে। বিজ্ঞান কি এমন মোবাইল আবিষ্কার করতে পারে না, যে মোবাইলে কোনো মেসেজ অপশন থাকবে না? ঠিক টিঅ্যান্ডটি ফোনের মতো? বিজ্ঞানীরা কী করে, বুঝি না। আমি বললাম, বিজ্ঞানীদের ওপর এত চাপ দেবেন না। পরে দেখবেন হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। বড়ভাই ‘হিতে বিপরীত’র ব্যাখ্যা চাইলেন। আমি বললাম, না, মানে এমনও হতে পারে, মেসেজ অপশনবিহীন মোবাইল আবিষ্কার না করে বিজ্ঞানীরা টিঅ্যান্ডটি ফোনে নতুনত্ব নিয়ে আসল। বড়ভাই বারকয়েক ঢোক গিলে বললেন, নতুনত্ব মানে? আমি বললাম, মানে হচ্ছে টিঅ্যান্ডটি ফোনে মেসেজ সিস্টেম চালু। তখন দেখা যাবে, টিঅ্যান্ডটি ফোনও সারা দিন টুংটাং আওয়াজ দিচ্ছে। বড়ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন, সত্যি সত্যি যদি এমন হয়, তাহলে কোনো ফোনই ব্যবহার করব না। না মোবাইল, না টিঅ্যান্ডটি। আসলে ফোন আবিষ্কার করাই ঠিক হয়নি। ওই যে আগে কবুতরের মাধ্যমে খবর আদান-প্রদান করা হতো, সেটাই ভালো ছিল। কোনোরকম টুংটাং আওয়াজ ছিল না। আমি বললাম, টুংটাং আওয়াজ না থাকলেও ‘বাকবাকুম’ আওয়াজ অবশ্যই ছিল। কবুতর চিঠি আনা নেওয়া করবে, অথচ দুয়েকবার বাকবাকুম করবে না, তা কি হয় নাকি? বড়ভাই এবার চরম বিরক্ত হলেন। তার অভিযোগ, আমি নাকি মূল প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে কথা বলছি। আমি যেই তাকে বোঝাতে গেলাম যে, আমি মোটেই মূল প্রসঙ্গের বাইরে যাইনি, তিনি আর দাঁড়ালেনই না।

এর একটু পরেই আমার এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা। যিনি মোবাইল দেখতে দেখতে হাঁটছিলেন। আমি বললাম, রাস্তায় হাঁটার সময় মোবাইল দেখা খুবই বাজে অভ্যাস। এই অভ্যাস ত্যাগ না করলে কপালে শনি আছে। কবে যে গাড়ির নিচে পড়ে অক্কা পাবেন, বলা দুষ্কর। প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, আমি আছি উভয় সংকটে। এই যে সারা দিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছি, এমনকি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও মোবাইল দেখছি, না দেখে করবটা কী? করোনার টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। তাও ম্যালাদিন আগে। এখন সারা দিন একটাই কাজ, মেসেজ কখন আসবে, সেই অপেক্ষায় মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ লাল বানিয়ে ফেলা। আচ্ছা ভাই, মেসেজ পাঠাবে পাঠাবে বলেও পাঠাচ্ছে না কেন? আমি বললাম, এটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে ওদেরকেই জিজ্ঞেস করেন। এক কাজ করেন, একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেন। নিশ্চয়ই ওরা রিপ্লাই দেবে। প্রতিবেশী বললেন, টিকার মেসেজ কখন আসবে, সেই অপেক্ষায় থেকে থেকেই চোখ লাল বানিয়ে ফেলেছি, এখন কোনো কিছু জিজ্ঞেস করে মেসেজ পাঠাতে গেলে দেখা যাবে রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় থেকে থেকে চোখে ছানি পড়ে যাবে। 

প্রতিবেশীর কথা শেষ হতে না হতেই আমার মোবাইল বেজে উঠল। মানে আমার মোবাইল আসল। আমি তাকিয়ে দেখি মোবাইল কোম্পানির মেসেজ। মানে ওরা অফার দিয়েছে। আমি প্রতিবেশীকে ব্যাপারটা বললাম। প্রতিবেশী বললেন, একটা ছেলে একটা মেয়েকে হুটহাট প্রেমের অফার দিলে সেটা যেমন লাগে, আমি মনে করি মোবাইল কোম্পানিগুলো যে হুটহাট করে মেসেজের মাধ্যমে আমাকে আপনাকে অফর দিচ্ছে, এটাও তেমনই। আপনার মতামত কী? আমি বললাম, মতামত জানাচ্ছি। আগে মেসেজটা ডিলিট করে নিই। মোবাইলে ফাউ মেসেজ থাকলে মোবাইলটা ভারী ভারী লাগে কি না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর