শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা
চায়ের দোকানেও কাজ করেছেন

মাগুরার মাশরুম বাবুল

রাশেদ খান, মাগুরা

মাগুরার মাশরুম বাবুল

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। যে কারণে সবাই তাকে অবহেলার চোখে দেখত। অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণির বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কৃষিখেত ও চায়ের  দোকান দিয়েছেন কিছুদিন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে যশোর হর্টিকালচার থেকে মাশরুম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেখান থেকে পাওয়া ১০টি মাশরুম দিয়ে যাত্রা শুরু করেন মাগুরা সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবুল আখতার। এর মাধ্যমেই তিনি শুরু করেন লক্ষ্যে পৌঁছার স্বপ্ন বুনা। বাবুল আখতার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে মাশরুম চাষের জন্য অনুকরণীয় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন গোটা দেশে। গড়ে তুলেছেন ড্রিম মাশরুম সেন্টার নামে একটি মাশরুম পল্লী। সারা দেশে তিনি মাশরুম বাবুল হিসেবে সমধিক পরিচিত। বড়খড়ি গ্রামের হাসেম মোল্যার ৯ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৫ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে বাবুল ৭ম। শুরুটা ছিল ২০০৭ সাল। ২০০৮ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ শুরু করেন। প্রথমে তেমন আশানুরূপ ফল পাচ্ছিলেন না। প্রথমে সাদা মাশরুম দিয়ে শুরু করলেও কাক্সিক্ষত ফলাফল মিলছিল না। প্রাথমিকভাবে তার একার উৎপাদিত খুবই সামান্য মাশরুম বিক্রির জন্য বাজার পাচ্ছিলেন না।

ফলে দুই-তিন বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে তার মাশরুম নিয়ে স্বপ্ন। পরবর্তীতে বড়খড়ি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেন মাশরুম চাষে। মহিলারা বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজের পাশাপাশি মাশরুম চাষ শুরু করে। বাবুল এলাকার সবার মাশরুম কিনে নেন। এতে তারা মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে রোজগার করতে থাকে। এদিকে বাবুল সেগুলো কিনে নিয়ে পরিমাণে অনেক বেশি হলে ঢাকার বিভিন্ন রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতে থাকেন। ২০১৩ সালের পর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এ সময় বড়খড়ি গ্রামেই গড়ে তোলেন ড্রিম মাশরুম সেন্টার নামে তার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। কাঁচা মাশরুম বিক্রির পরিবর্তে সেগুলো শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনেক বেশি দামে বিক্রি শুরু হয়। পাশাপাশি ক্যাপসুল তৈরি করে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি শুরু করেন। এ প্রতিষ্ঠানে তিন শতাধিক নারী-পুরুষ কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

সেই সঙ্গে মাশরুম উৎপাদনেও পরিবর্তন এনেছেন। বর্তমানে বাটন, গ্যানো ডরমা ও ওয়েস্টার জাতের মাশরুম তার এখানে চাষ করা হয়। দেশি- বিদেশি পদ্ধতির ব্যবহার করে তিনি মাশরুম চাষ করছেন। মাশরুম চাষের জন্য প্রয়োজন হয় কাঠের গুঁড়া, ধানের তুষ, গামের ভূষি, ভুট্টার গুঁড়াসহ নানা উপকরণ। প্যাকেট থেকে বীজ বের হতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৩৫ দিন। এটি পরিপূর্ণ হয় প্রায় ৩ মাস পর। প্রক্রিয়াজাতকরণের পর এটিকে বাজারজাত করা হয়।

বাবুল জানান, দেশের অভ্যন্তরে বিক্রির পাশাপাশি ভারতের কলকাতায় বিক্রির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এ বছরের মধ্যেই বাজারজাত করতে পারব বলে আশা করছি। বাবুলের সহযোগিতায় বড়খড়ির প্রতিটি বাড়িতেই এখন আধুনিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। মাশরুম চাষের মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষকেও এনে দিয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি। বড়খড়ি এখন মাশরুমের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বেকার যুবকদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। মাশরুম চাষে সাফল্যের জন্য ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর