শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরফের হ্রদ টসমগো

বরফের হ্রদ টসমগো

টসমগো হ্রদ সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এ হ্রদের উচ্চতা ১২ হাজার ৭০০ ফুট। এ হ্রদ বেশি পরিচিত চাঙ্গু নামে। ঘুরে এসে লিখেছেন- গাজী মুনছুর আজিজ ছবি : লেখক

সিকিমের টসমগো হ্রদের পাড়ে দাঁড়িয়ে কেবলই মনে হচ্ছে স্বপ্নের ভিতর আছি। কারণ এর আগে কখনো বরফ জমা লেক বা হ্রদ দেখিনি। সত্যিই অদ্ভুত। হ্রদটি চাঙ্গু নামে আরও বেশি পরিচিত। সিকিম ট্যুরিজম সংস্থার তথ্য অনুয়ায়ী সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১২ হাজার ৭০০ ফুট। উচ্চতার জন্য প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। এ ঠাণ্ডাতেই পুরো হ্রদের পানি জমে বরফ হয়ে আছে। আর এ ঠাণ্ডার ভিতরই অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। হ্রদের প্রবেশ মুখে ছোট্ট এক সেতু। এ সেতু পার হয়ে হ্রদের পাড় ধরে হেঁটে আসি ভিতরে। আমাদের সবার গায়ে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডার কাপড় জড়ানো। পায়ে গামবুট। কারণ বরফের ভিতর হাঁটতে হলে এ বুটের বিকল্প নাই। অনেকটা গোল আকৃতির এ হ্রদের চার পাশেই পাহাড়। এসব পাহাড়সহ আশপাশের পাহাড় থেকে গলিত বরফের পানি বা তুষারপাতের পানিই এ হ্রদের উৎস। আশপাশে যেসব পাহাড় আছে, তার অধিকাংশই তুষারপাতের বরফে ঢাকা। যেন বরফেরই পাহাড়। পর্যটকরা সবাই হ্রদের পাড়েই হাঁটাহাঁটি করে। মাঝখানটায় কেউ যায় না। হ্রদের পাড়েই থাকে। সাদা তুলোর মতো এ বরফের রাজ্যে কোথাও কোথাও পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ডেবে যাচ্ছে। আবার কোথাও শক্ত। আমাদের সবাই মহা খুশি এমন একটি জায়গায় আসতে পেরে। খুশির চোটে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা সত্ত্বে দলের সদস্য আম্মার প্যান্ট বাদে তার সব কাপড় খুলে একদম খালি গায়ে ছবি তুলছে মহা আনন্দে। অন্যদিকে জাকির, মামুন, রাসেল, অর্নি, মিষ্টি ও তিথি যে যার মতো দুষ্টমি করছে। কেউ কেউ বরফে গড়াগড়ি খাচ্ছে মহা আনন্দে। হ্রদের পাড়ে অনেক ইয়াক আছে। দেখতে আমাদের গরু-মহিষের মতো। তবে আমাদের গরু-মহিষের তুলনায় এদের পা একটু খাটো। অনেকেই এ ইয়াকের পিঠে চড়ে হ্রদের পাড়ে ঘুরছেন।

হ্রদের পাড়ে একটি বৈঠকখানা আছে। হাঁটাহাঁটি করে যাদের ক্লান্তি লাগছে তারা বসে বিশ্রাম নেন। এ ছাড়া হ্রদের প্রবেশ মুখেই আছে রোপওয়ে। এ রোপওয়ের উচ্চতা ১৪ হাজার ৫০০ ফুট। এটি এশিয়ার সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রোপওয়ে বলে দাবি এখানকার কর্তৃপক্ষের। এ রোপওয়েতে চড়ে পাখির চোখে দেখা মেলে কাঞ্চনজংগা, ভারত-চীন সীমান্ত, ভুটান, দার্জিলিং ও টসমগো হ্রদ। হ্রদের পাড়ে বা হ্রদ সংলগ্ন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ছোট ছোট কিছু গাছ আছে। গাছের পাতাগুলো প্রায় নিষ্প্রাণ। তবে বসন্তে এসব গাছ আবার সতেজ হয়ে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর হ্রদ থেকে বের হই। হ্রদের অধিকাংশ পাহাড়ের সঙ্গে মিশেল হলেও একপাশ দিয়ে পথ আছে। অবশ্য এ পথের পরেই পাহাড়। এ পথে দাঁড়িয়েও অনেকে উপভোগ করছেন হ্রদের সৌন্দর্য। হ্রদের প্রবেশ এলাকায় অনেকগুলো চা-কফির স্টল, রেস্টুরেন্ট, গিফট শপ ও গরম কাপড়ের দোকান আছে। এসব দোকানের ছাদও তুষারপাতের বরফে ঢাকা। দোকানগুলোতে আছে গামবুট, জ্যাকেট, হ্যান্ডগ্লাভস, মোজাসহ বিভিন্ন গরম কাপড়। বিক্রির পাশাপাশি এসব গামবুট বা গরম কাপড় ভাড়া দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের কাছে। আমরা যখন হ্রদের এলাকায় আসি তখন পর্যটকের অসংখ্য গাড়ি দেখি। অর্থাৎ হ্রদ দেখে এরই মধ্যে সবাই এলাকা ছেড়েছেন। তাই আমরাও গাড়িতে উঠি সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশে। আসছিও রিজার্ভ করা এ সমুতে। গ্যাংটক থেকে এ হ্রদের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। হ্রদ থেকে নামার এ পথের দুই পাশেও আছে বরফের স্তূপ। এ পথ পুরোটাই আঁকাবাঁকা। সাদা বরফ রাজ্যে পাহাড় ঘেঁষা পিচের আঁকাবাঁকা পথে চলছি। বলা চলে দারুণ। বেশ কিছুক্ষণ চলার পর অতিক্রম করি পুলিশ চেকপোস্ট। যাওয়ার সময় এ চেকপোস্ট থেকে এক কপি ছবিসহ পাসপোর্ট ও ভিসার ফটোকপি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়েছে। ফেরার পথেও তা দেখাতে হলো। এর পুরো বিষয়গুলো দেখভাল করেন চালক। সিকিমের যে কোনো স্থান ঘুরতে হলে এখানকার সরকারের অনুমদিত ট্যুরিস্ট এজেন্টের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়। আর চালক বা গাড়ি এজেন্টেরই অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সঙ্গে একজন গাইডও আছেন। এ গাইডও এজেন্টের। যে এজেন্টের মাধ্যমে অনুমতি নিতে হয়, সেই এজেন্টই গাইড দিয়ে দেন।

চেকপোস্ট পেরিয়ে কিছুটা আসলে বিরতি দিই একটি রেস্টুরেন্টের সামনে। চা-কফি শেষে আবার গাড়িতে উঠি। পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি চলছে গ্যাংটকের দিকে। আর ঘড়ির কাঁটা বিকাল ছুঁই ছুঁই।

যেভাবে যাবেন : বাস, ট্রেন বা বিমানে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে সমু জিপে গ্যাংটক। ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ রুপিতে জিপ রিজার্ভ করা যাবে। যাওয়া যাবে ৮ বা ৯ জন। গ্যাংটক থেকে সমু জিপ রিজার্ভ করা যাবে। সকালে রওনা হয়ে বিকালে ফেরা যাবে।

যেখানে থাকবেন : গ্যাংটকে নানা মানের অসংখ্য হোটেল আছে। ভাড়া ২ থেকে ৫ হাজার রুপি।

খাওয়া-দাওয়া : গ্যাংটকে অনেক হোটেল-রেস্টুরেন্ট আছে। সাদাভাত, রুটি, মাছ, মাংস, শাকসবজি সবই মিলবে। ১০০ থেকে ২৫০ রুপিতে থালি প্যাকেজ আছে।

মনে রাখুন : সিকিমের সব দর্শনীয় স্থানেই যেতে হলে আলাদা অনুমতি নিতে হবে পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসার ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর