শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

‘হ্যালো ওসি’

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

‘হ্যালো ওসি’

এ যেন বদলে যাওয়া পুলিশের গল্প। সেবা দিতে পুলিশের দ্বারে জনগণ নয়, জনগণের দ্বারেই আসছে পুলিশ। এ সেবার আওতায় এলাকায় এলাকায় গিয়ে বুথ খুলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকেন বসে। বলেন জঙ্গিবাদের কুফলের কথা শোনেন মাদক, ইভটিজিংসহ নানা সমস্যার কথা। ওই স্পটে বসেই কিছু সমস্যার সমাধান করে দেন। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আইনি সহায়তার আশ্বাস দেন থানার বড় কর্তা। এরকম অসাধারণ এক সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যালো ওসি’। পুলিশের ব্যতিক্রমধর্মী এ সেবায় খুশি সাধারণ জনগণ। এমনকি সিএমপির নতুন এ সেবার বিষয়ে জানতে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে আসেন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা প্রশংসা করেছেন সিএমপির নতুন এ সেবা কার্যক্রমের।

নগরীর কোতোয়ালি থানা থেকে চালু হওয়া ‘হ্যালো ওসি’ কার্যক্রমটি নগরবাসীর পাশাপাশি নজর কেড়েছে সিএমপির কমিশনার মাহবুবর রহমানেরও। গত ১৭ জুলাই সিএমপির মাসিক অপরাধ পর্যালোচনায় মাহবুবর রহমান নগরীর ১৬ থানার ওসিদের এ কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে নগরীর প্রত্যেক থানা এলাকায় চালু করা হয় ‘হ্যালো ওসি’ সেবা কার্যক্রমটি। দেশি পুলিশের পাশাপাশি হ্যালো ওসি সেবার বিষয়ে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বিভাগ। এরই মধ্যে ইপিট্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ১৩টি দেশের পুলিশ গ্রহণ করেছে নতুন এ সেবা। সিএমপির কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, ‘জনগণকে থানামুখী করার একটি অসাধারণ উদ্যোগ হচ্ছে ‘হ্যালো ওসি’। এ সেবার মাধ্যমে পুলিশ জনতার দূরত্ব আরও কমবে। এতে করে অপরাধীদের বিষয়ে আরও তথ্য পাবে পুলিশ। যা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে।’ কমিশনার বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৬ থানা পুলিশকে এ সেবা চালু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক থানা পুলিশ এ কার্যক্রম শুরুও করেছে। এ বছরের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের প্রত্যেক থানা পুলিশকে জনগণের আরও কাছে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা আসে পুলিশ সদর দফতর থেকে। এ নির্দেশনা পেয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার পরিকল্পনা করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন। ওই নির্দেশ অনুসারে তিনি থানা কম্পাউন্ডে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। যাতে সেবা প্রার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে সাতটি বুথ খোলা হয়। যার মধ্যে একটি বুথের নাম দেওয়া হয় ‘হ্যালো ওসি’। ওই বুথের প্রতি প্রথম দিন থেকেই সাধারণ লোকজন বেশ আগ্রহী ছিল। সবাই সরাসরি ওসির সঙ্গে কথা বলে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পেরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বুথটি। এরপর থানার বাইরে ‘হ্যালো ওসি’ নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। থানার বাইরে প্রথম আয়োজনটি করা হয় মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিত নগরীর চৌদ্দ জামতলা এলাকায়। ব্যতিক্রমী এ থানায় ছুটে আসতে থাকেন সেবা প্রার্থীরা। তারা প্রাণ খুলে কথা বলেছেন থানার ওসির সঙ্গে। শুধু ভুক্তভোগীই নন, অনেক অপরাধীও এসেছেন অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে আসার আকুতি নিয়ে। কেউ জানান ব্যক্তিগত অভিযোগ, কেউ বলছেন এলাকার নানা সমস্যার কথা। অনেকে আবার অপরাধমুক্ত এলাকা গড়তে দিচ্ছেন সুন্দর কিছু প্রস্তাবনা। ওসি নিজেই টুকে নিচ্ছেন অভিযোগ, সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকই সমাধান করছেন।  নিজ এলাকায় বসেই ওসিকে অভিযোগ দিতে পেরে খুশি মানুষ। সিএমপির কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, ‘হ্যালো ওসি সেবাটি’র সুফল পেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনেক অপরাধী এ সেবার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।’ হ্যালো ওসির সেবার মূল পরিকল্পনাকারী সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে পুলিশকে জনগণের আরও কাছাকাছি যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা পেয়ে ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা আসে মাথায়। এরপর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে থানায় সেবার পরিধি বাড়াতে সাতটি বুথ করা হয়। ওই বুথগুলোর একটিতে আমিও ছিলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর