বিজ্ঞানীরা রোবট নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এক অভিনব পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছেন। এই পদ্ধতিতে মাইসেলিয়াম নামে ছত্রাকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দুটি রোবট পরিচালনা করা হয়েছে। মাইসেলিয়াম মূলত মাশরুমের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা এক ধরনের জৈব নেটওয়ার্ক, যা বৈদ্যুতিক সংকেতে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরেন্সের গবেষকদের একটি দল দুটি নতুন রোবট তৈরি করেছেন, যেগুলোর একটি তারামাছের মতো আকৃতির, আর অন্যটি চাকার উপর চলাচল করতে সক্ষম।
এই দুটি রোবট মাইসেলিয়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। মাইসেলিয়াম বৈদ্যুতিক সংকেতে পরিণত হয়ে রোবটগুলোর নড়াচড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। জীবন্ত মাইসেলিয়াম বিভিন্ন ধরনের আলো এবং স্পর্শের প্রতি সাড়া দেয়, যা রোবট পরিচালনায় মূল ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতিতে মাইসেলিয়ামের সক্রিয় অবস্থা ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করেন, যা রোবটের কাজের গতিপথ ঠিক করে দেয়।গবেষণা দলের প্রধান কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্গানিক রোবোটিকস ল্যাবের আনন্দ মিশ্র জানান, এই সক্রিয় ব্যবস্থা আলো, স্পর্শ ও তাপের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। এমনকি কিছু অজানা সংকেতেরও প্রতিক্রিয়া দেয়। ভবিষ্যতে রোবট পরিচালনায় মাইসেলিয়ামের জীবন্ত গুণাবলির পুরো সুবিধা আমরা নিতে পারব।
রোবটগুলোর চলাচল পরিবর্তনে গবেষকরা অতিবেগুনি রশ্মি ব্যবহার করেছেন। এই রশ্মির মাধ্যমে মাইসেলিয়াম উদ্দীপ্ত হয়ে রোবটের নড়াচড়ায় পরিবর্তন আনে। এতে দেখা যায়, ছত্রাক কেবল পরিবেশ বুঝে সাড়া দেয় না, বরং সেটি পরিবর্তনও করতে পারে।
জ্যেষ্ঠ গবেষক রব শেফার্ড এ বিষয়ে বলেন, আমরা আলোকে ইনপুট হিসেবে ব্যবহার করেছি, তবে ভবিষ্যতে রাসায়নিক উপাদান দিয়ে রোবট পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ধরনের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে কৃষি ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। রব শেফার্ড মনে করেন, মাইসেলিয়াম দিয়ে নিয়ন্ত্রিত রোবটগুলো মাটির গুণমান পরীক্ষা করতে পারবে, এমনকি কখন মাটিতে সার প্রয়োগ করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।
এ আবিষ্কার রোবটিকস জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে জীবন্ত ছত্রাকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রোবট পরিচালনা সম্ভব হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল